মহান মে দিবস আজ। বুধবার (১ মে) বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। সারা বিশ্বেই এ দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু বৈশাখের তপ্ত সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার শ্রমিকরা কাজে ঘেমে-নেয়ে একাকার। সকালের আলো ফোটার আগেই কাজে নামতে হয়েছে তাদের। সারাদিন চলবে তাদের কাজ। এ কাজের মজুরি দিয়েই চলে তাদের সংসার।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোরের আলো ফোটতেই শুরু হয়ে যাওয়া কাজ বিরতিহীনভাবে চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সারাদিন বালু টানা কাজ চলবে। তাদের অনেকেই মে দিবসের তাৎপর্য জানেন না। শুধু জানেন, কাজে না আসলে সংসার চলবে না। পরিবারের খাবার জোগাতে হলে কাজ করতে হবে।
মঠবাড়িয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বালুঘাটের শ্রমিক আব্দুর রহিম কালবেলাকে জানান, বালুর ট্রলার থেকে এক টুকরি বালু ট্রাকে তোলার জন্য একজন শ্রমিক দুই টাকা মজুরি পান। সারা দিন বালু তোলার কাজ করে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করতে পারি। বর্তমান বাজারের যে অবস্থা এতে আমাদের সংসার চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। তার ভেতরে আজকের যদি কাজ বন্ধ রাখি তাহলে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলার আমড়াগাছি ইউনিয়নের নির্মাণশ্রমিক আলতাফ হোসেন বলেন, বাসায় বসে থাকলে কেউ টাকা দিয়ে যাবে না। আমাদের কোনো মে দিবস নাই। মে দিবসে বড় বড় কোম্পানির কাজ বন্ধ থাকে। আমাদের সংসার চালানোর জন্য কাজ করে যেতে হচ্ছে। কাজে না আসলে সংসার চলবে না।
উপজেলার মাছুয়া ইউনিয়নে জাফর ইকবাল বলেন বলেন, মাটিকাটা, পাইপ লাগানো থেকে শুরু করে আরও অনেক কাজ করি। কোনোদিন কাজ পাই আবার কোনোদিন পাই না। সাধারণত দিনে ৫০০ টাকা মজুরি পাই। মে দিবসে কাজে না গিয়ে বাসায় বসে থাকলে আয় হবে কীভাবে। পরিবার চালাতে হলে কাজে আসতে হবে।
মঠবাড়িয়া রিকশা-অটোরিকশা, ভ্যানশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ-উল-হক কালবেলাকে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা, জীবনমান উন্নয়নসহ শ্রমিকবান্ধব আইন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজ বিকাল তিনটায় শ্রমিকদের নিয়ে আমাদের শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা রয়েছে।
১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা’।