বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তার সহযোগীকে মারধর করায় ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ১৩ জন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী, চারজন স্থানীয় এবং ১০ জন অজ্ঞাত হামলাকারী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মিরাজ বলেন, ১০ জানুয়ারি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে হামলাকারী আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান শুরু করেছি। এছাড়া পুরো ঘটনা তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। ঘটনার মূল ভিক্টিম মাসুম হাসপাতালে ভর্তি। তার মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হুমাহুম রেস্টুরেন্টে দুপুর আড়াইটার দিকে খাবারের বিল পরিশোধ করছিলেন ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির। সঙ্গে তার মোটরসাইকেল চালক মাসুম ছিলেন। এই সময়ে স্থানীয় কয়েকজনের নেতৃত্বে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ২৫/৩০ জনের একটি দল রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে প্রথমে কাউন্সিলরের মোটরসাইকেল চালক মাসুমকে মারধর শুরু করে। হামলাকারীরা স্প্রাইট-পেপসির কাঁচের বোতল দিয়ে মাসুমের মাথায় ও শরীরের আঘাত করে। এসময়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে কাউন্সিলর হুমায়ুন কবিরকে ঘুষি ও লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয় তারা।
ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র ও স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হামলার পূর্বে ভোরে কালোজিরা এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রে কাউন্সিলরের সঙ্গে বিবাদে জড়ান।
সূত্রগুলো বলছে, একটি ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার করে রাখেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির। সেখানে সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গিয়ে অবস্থান নেন এবং কাউন্সিলরের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। এক পর্যায়ে কাউন্সিলরের মোটরসাইকেল চালক মাসুম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীদের একজনকে একটি ঘুষি দেন।
সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসে পরিকল্পিতভাবে রূপাতলীতে অবস্থান নেন। রুপাতলীর ওই রেস্টুরেন্টে খাবার থেকে আসবেন কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির এই তথ্যও সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা। তথ্য অনুসারে কাউন্সিলর তার সহযোগীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এলে হামলা চালায়।
মারধরে আহত মাসুম বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাসুমের মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তার র্দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা দরকার।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ূন কবির বলেন, নির্বাচনের দিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল দক্ষিণ জাগুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেন। ভোটাররা যেন নৌকায় ভোট না দিয়ে ট্রাক প্রতীকে ভোট দেয় সেভাবে মানুষজনকে প্রভাবিত করছিল। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি তোমরা এখানকার ভোটার না, এসবের মধ্যে তোমাদের থাকার দরকার নেই। তোমরা ক্যাম্পাসে ফিরে যাও এবং লেখাপড়া করে বড় মানুষ হও। কিন্তু তারা যাচ্ছিল না। শেষে আমি দায়িত্বরত এসআই বিজয়কে অনুরোধ করি ভোটার ছাড়া সকলকে সরিয়ে দিতে। এ সময় আমার মোটরসাইকেল চালক মাসুম শিক্ষার্থীদের বলেছিল, তোরা কি কেন্দ্র ছাড়বি নাকি কেন্দ্র ছাড়তে বাধ্য করবো। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে রূপাতলীতে আমাদের পেয়ে মারধর করে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল কাইউম বলেন, রূপাতলীর একটি রেস্টুরেন্টে মারামারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শুনেছি। কিন্তু মামলার আসামি কারা তা জানি না।
প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী বিপদে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বদা পাশে পাবে। কিন্তু ক্যাম্পাসে বা ক্যাম্পাসের বাইরে অন্যায় কোনো কাজে জড়িত হলে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে না। এই দায় শিক্ষার্থীকে নিজেকেই নিতে হবে। অন্যায় করলে আইন আইনের গতিতে চলবে উল্লেখ করে ড. আব্দুল কাইউম বলেন, কোনো শিক্ষার্থী ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো অঘটন ঘটালে তার দায় আমরা কেন নেব? রূপাতলীর ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।