দলীয় বিধিনিষেধ দিয়েও থামানো যাচ্ছে না বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ভোটের মাঠে সক্রিয় দেখা গেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। পদধারী নেতাকর্মীরা কৌশলে তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নামিয়েছেন। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কেউ নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রথম দফার নির্বাচনে ভোট হচ্ছে বরিশাল সদর ও বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা কোনো-না কোনো প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের এক বিএনপি নেতা সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পদধারীর নেতারা প্রকাশ্যে কেউ নামেনি। কিন্তু তাদের অনুসারীরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার করছে।
তার মতে, পদবিধারী নেতাদের দলের প্রতি কোনো দায় নেই। পদ নিয়ে নানা বাণিজ্য করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাই যে যেভাবে পারে বাণিজ্য করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক নেতা জানিয়েছেন, সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সিংহভাগ নেতাকর্মীরা নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন। গোপনে অনেক পদবিধারী নেতা বিভিন্ন প্রার্থীদের সাথে সভা করেন। প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাদের সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সহসভাপতি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেওয়াসহ নানা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির পদধারী এক নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ওই নেতা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে এক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন।
চাঁদপুরা ইউনিয়ন বিএনপির নেতা এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণার জন্য তার অনুসারীদের মাঠে নামিয়েছেন। চরবাড়িয়া ইউনিয়নে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধশত নেতা নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। বাকেরগঞ্জ উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কোনো পদধারী নেতা সক্রিয়ভাবে সমর্থন করেন না। তবে পদ ছাড়া বিএনপির সমর্থক ও একনিষ্ঠ অন্তত ৪০ ভাগ ভোটার বর্তমানে সক্রিয়। তারা নিয়মিত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। বিএনপির ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিতে আসবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে বাকেরগঞ্জ পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন, মানুষ ভোট দেওয়ার বিষয়ে এখনও সন্দিহান। ভোটের পরিবেশ তৈরি হয়নি। বিএনপির তো নয়, সাধারণ ভোটারদের ১০ ভাগ আসবে কি না সন্দেহ। তবে বিএনপির অনেক কর্মী নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম সাবু বলেন, কোনো নেতাকর্মী ভোটে কাজ করবে না। এমনকি যারা বিএনপিকে ভালোবাসে, সাধারণ ভোটাররাও কেন্দ্রে যাবে না। কেউ গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন বলেন, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ করেছে। তাদের আমি বলে দিয়েছি, প্রমাণ দিতে। বর্তমানে মোবাইলের যুগ। কোনো পদবিধারী নেতা কোনো প্রার্থীর পক্ষে দেখলেই ছবি তুলে অভিযোগ দিতে বলেছি। প্রমাণ পেলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, আমরা মিটিং করে সবাইকে বলে দিয়েছি। কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীন বলেন, এসব দেখার জন্য তাদের মনিটরিং টিম রয়েছে। তারা ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মনিটরিং করছে। প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।