এসএন পলাশ: বরিশাল নগরের ৩০ ওয়ার্ডে সক্রিয় রয়েছে দুই ডজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ফেসবুক গ্রুপে নিজস্ব বাহিনী বানিয়ে এলাকাভিত্তিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। র্যাগিং, যৌন হয়রানি, মারামারি, কোপানো, ছিনতাই, মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসে জড়িত এসব গ্রুপের সদস্যরা। অল্প বয়সের এসব কিশোর গ্যাং সদস্য নিজেদের বাঁচাতে ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করে। অচিরেই এদের লাগাম টানা না হলে ভয়াল আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা সচেতন মহলের।
এলাকাভিত্তিক অদ্ভুত সব নামে সক্রিয় এসব ফেসবুক গ্রুপ ও ভাই গ্রুপে বিশাল বাহিনী থাকলেও নিয়ন্ত্রণকারী আছে দু-তিনজন সদস্য। গত এক মাসে নগরীতে বেশ কয়েকটি কোপানো ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে এসব গ্রুপ। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আরিচুল হক বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া স্কুল-কলেজ সময়ে আমাদের ডিউটি গাড়ি বাড়িয়ে দিয়েছি। একই কথা বলেন, বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, এদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করছে।
জানা গেছে, এসব গ্রুপের বড় একটা অংশ জুয়াবাণিজ্যও নিয়ন্ত্রণ করে। অনলাইন-অফলাইনে চলে তাদের এ বাণিজ্য। জুয়ার টাকা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ ও হত্যার ঘটনাও ঘটছে। সাত দিন আগে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল লেনে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ইসলামপাড়ার এম বাপ্পে গ্রুপের বাপ্পি। এ ঘটনায় মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছে মেডিকেল লেনের অলি-আরিফ গ্রুপের সদস্যরা। এ ঘটনার দুদিন পরে আলেকান্দা রিফিউজি কলোনিতে কিশোর গ্যাংয়ের কোপাকুপির ঘটনায় গ্রেফতার হয় কলোনি গ্রুপের অন্তর-রায়হান।
সরেজমিন দেখা যায়, স্কুল-কলেজ ক্যাম্পাস ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে কিশোর গ্যাং সদস্যদের র্যাগিং, যৌন হয়রানি, মারামারি, ছিনতাই, মাদকের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ লেগেই থাকে। এতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে আসা লোকজন বিপাকে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন, বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলসপার্ক), জিলা স্কুল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া ভাটিখানা, দপ্তরখানা, কাটপট্টি, কাউনিয়া, পলাশপুর, কেডিসি, বিএম স্কুল, কলেজ-রোড, কাশিপুর, নথুল্লাবাদ, রূপাতলী, আমতলার মোড়, বাংলাবাজারে রয়েছে একাধিক কিশোর গ্যাং গ্রুপ।
এ গ্রুপগুলো হচ্ছে- গরিয়াড় পাড়ের রিফাদ-রিয়াদ গ্রুপ, চৌমাথায় সাগর-শাহরুখ গ্রুপ, নিউ সাকুলার রোড জিহাদ গ্রুপ, বাংলাবাজারে মুন্না-সামির গ্রুপ, কালুশাহ সড়কে হিরা গ্রুপ, বটতলা এলাকায় স্টারলিং গ্রুপ, পলিটেকনিক রোডে শাওন রাব্বি-নাঈম গ্রুপ, ওকডিসিতে এনা-ওলু বাহিনী, চাঁদমারীর আল আমিন গ্রুপ, পলাশপুরের পলাশ বাহিনী। এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগ থাকলেও তা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজে আসছে না।
নারী নেত্রী ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে এসব ছেলেরা আরও বেপরোয় হয়ে উঠছে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করা না হলে শুধু মামলা দিয়ে এদের সংশোধন করা সম্ভব নয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ শুরু করব। কিশোর গ্যাং সদস্যদের পেছনে যদি কোনো রাঘববোয়াল থাকে তাদেরও ধরা হবে।