এইচ আর হীরা : আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরীর গরুর মাংস বিক্রেতারা কেজি প্রতি প্রায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করছে। যেখানে কিছুদিন পূর্বেও গরুর মাংসের কেজি ছিলো ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা। সেখানে ঈদের পাচঁ দিন আগে থেকেই ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছে তারা। বুধবার বিকেলে নগরীর নথুল্লাবাদের কাঁচা বাজার, চৌমাথা বাজার ও হাটখোলা বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে, গরুর গোশতের দাম বৃদ্ধির খবরে সোস্যাল মিডিয়া ফেইসবুকে সাধারণ ক্রেতারা দোকানে বিক্রি গরুর মাংস না কেনার হুমকি দিয়ে বয়কট ঘোষণা দেয় অসংখ্য ফেইসবুক ব্যবহারকারী। বয়কটকে সমর্থন জানিয়ে বরিশাল নগরী বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসিন্দারা দোকানে বিক্রিত গরু না কিনে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে চাঁদা ধার্য করেন। পরে সকলের চাঁদার উপর ভিত্তি করে আস্ত গরু কিনে নিজদের মধ্যে বন্টন করে নেয়। বুধবার নগরীর ২২নং ওয়ার্ডে জিয়া সড়ক মদিনা মসজিদের সামনে এমনই এক উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা গেছে। জানা যায়, মদিনা মসজিদ এলাকার ৭০ পরিবার ৩ হাজার টাকা চাঁদা ধার্য করে ১লাখ ৯৭ হাজার টাকায় ৭ মন ওজনের একটি ষাড় গরু কিনে ৭০ পরিবারের মাঝে সঠিক মাপে বন্টন করা হয়। নগরীর জিয়া সড়ক এলাকা ছাড়াও বৌদ্য পাড়া,শিকদার পাড়া, কাজিপাড়া, পলাশপুর এলাকাসহ আরও বেশকিছু এলাকার বাসিন্দারা এরকম উদ্যোগ নিয়ে অনেকেই গোশতের দোকান থেকে ক্রয় করা থেকে বিরত রয়েছেন। এবিষয়ে গরু কেনার উদ্যোগে অংশগ্রহনকারী স্থানীয় বাসিন্দা মিজান জানান,গরু বিক্রেতাদের সিন্ডিকেট ভাংতেই তসদের এই উদ্যোগে অংশগ্রহন করা।মিজান বলেন, দোকানের গরুর গোশত কিনলে আমরা অনেক ভাবে প্রতারিত হই। যেমন, মাপে চুরি, মহিষের গোশত গরুর গোশত বলে বিক্রি, দুই তিন দিনের পুরনো গোশত বিক্রি করে তারা । এরপর আবার, এখন যেভাবে দাম বৃদ্ধি হয়েছে তাতে চাহিদার তুলনায় গরুর গোশত কেনা সাধ্যের বাইরে। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে এখানে কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে আনরা প্রত্যেকেই খুব খুশি।
চাঁদা ধার্য করে গরু কেনার উদ্যোগ গ্রহনকারী মোঃ জসিম জানান,আমাদের এলাকায় বিভিন্ন সময়ের বিশেষ দিনের পূর্বে এলাকার সকলে একত্রিত হয়ে সদস্য অনুযায়ী চাঁদা ধার্য করি। পরে সদস্যদের টাকার উপর ভিত্তি করে গরু কেনা হয়। এবারও তেমন হয়েছে। আমরা সবসময় ৪০থেকে ৫০ জন সদস্য মিলে গরু কিনে বন্টন করি। কিন্তু এবারের ঈদে যেভাবে গরুর মাংসের কেজি বেড়েছে এজন্য সদস্য সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেশি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারে আমারা ৭৭জন সদস্যদের থেকে ৩হাজার টাকা চাঁদা ধার্য করে ১লাখ ৯৭ হাজার টাকায় গরুটা কিনি। পরে গতকাল সকালে গরুটি জবাই করে প্রতি সদস্যকে ৪ কেজি করে গোশত দিতে পেরেছি। তাতে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি প্রায় একশো টাকা কম দামে পেরেছি। জসিম ছাড়াও এই উদ্যোগ গ্রহণে সহযোগিতা করেছেন জিয়া সড়ক এলাকার মনির, সিন্টু, আতিক, মিরাজ, টুটুল সহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবক।
জিয়া সড়ক এলাকার বাসিন্দা রানা হাওলাদার বলেন,আমাদের এলাকায় এরকম উদ্যোগ এর আগেও নেয়া হয়েছে। দিন দিন এই কার্যক্রম ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গরুর মাংসের উচ্চমূল্য থাকার কারণে আমরা এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তিনি আরও বলেন, ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরুর গোশত রান্না হবে। এ ধরনের উদ্যোগের কারণে সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ আরও জোরদার হয়।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক এবং বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় ঈদের দিনে তাদের বেশ বাড়তি আনন্দ দেয়। গোশত ভাগবাটোয়ারা করা, গোশত রান্না করার মধ্যেও এক ধরনের আনন্দ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এ ধরনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ সমিতিকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে। জিয়া সড়ক এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক ও সংগঠক এইচ আর হীরা বলেন, সকল শ্রেণির লোকজনের অংশগ্রহণে এ ধরনের উদ্যোগ সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে ঈদের আনন্দটাও অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটা খুবই ইতিবাচক কার্যক্রম বলে মনে করেন তিনি।
০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বরিশালে দোকানে বিক্রি মাংস বয়কট করে চাঁদা তুলে মাংস বন্টন!
- বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
- আপডেট সময় : ০৭:৫৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪
- ১০৪ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
barisal news
জনপ্রিয় সংবাদ
সর্বশেষ সংবাদ