বার্তা ডেস্ক ॥ বরিশালের উজিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ঘুস, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগের ব্যবস্থা নিতে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজির (উপমহাপরিদর্শক) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ছয় মেম্বারসহ বিভিন্ন পেশার ২০ ব্যক্তি।
অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে উজিরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজাহারুল ইসলামকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ডিআইজি জামিল হাসান।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) এ ঘটনায় অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ও অভিযোগকারীদের নিজ দপ্তরে তলব করেন উজিরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজাহারুল ইসলাম।
অভিযোগকারী ২০ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন বামরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সুমন হাওলাদার, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম হাওলাদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাইনুল ইসলাম তালুকদার, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শাহীন হাওলাদার, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সলেমন হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বজলুর রহমান, বামরাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠু মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও বামরাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজ হোসেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, উজিরপুর মডেল থানায় কর্মরত এসআই মেহেদী হাসান বামরাইল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (বিট কর্মকর্তা)। তিনি সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন। গ্রামের নিরীহ মানুষকে ধরে আনেন এবং ছেড়ে দিতে ঘুস নেন। গ্রামের লোকজনের পারিবারিক ছোটখাটো ঘটনা মীমাংসায় বাধা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বামরাইল ইউনিয়নের সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। অভিযোগকারীরা তাকে উজিরপুর থানা থেকে প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন।
এরআগে দুর্ব্যবহার ও রূঢ় আচরণের কারণে গতমাসে বামরাইল ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ সদস্যরা এসআই মেহেদীর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মাইনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এসআই মেহেদী হাসান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পুরো গ্রাম অশান্ত করে তুলছেন। যুবক ও কিশোরসহ সাধারণ মানুষ রাস্তাঘাটে দেখলেই তাদের মাদকে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন। গ্রামে পারিবারিক ছোটখাটো ঘটনা ঘটলে তিনি মীমাংসা করতে বাধা দেন। কোনো পারিবারিক সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রতি ঘটনায় মেহেদী হাসানকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। না দিলে মামলা দেওয়ার ভয় দেখান।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব কাজে আমি বাধা দিলে মেহেদী হাসান আমাকে মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকিও দেন।’
গ্রামের এক মেয়েকে প্রেমঘটিত ঘটনায় জড়িয়ে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এসআই মেহেদী হাসান ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সেলিম হাওলাদার।
ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠু মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করেন এসআই মেহেদী হাসান। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মেহেদী হাসান বলেন, এ অভিযোগের কোনো সত্যতা নাই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।
উজিরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাজাহারুল ইসলাম বলেন, এসআই মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর দেওয়া লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।