পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আগের জৌলুশ হারানো ঢাকা-বরিশাল নৌরুট ভাড়া না বাড়িয়েও মিলছে না কাঙ্খিত যাত্রী। ফলে সহজেই লঞ্চের টিকিট কিনে নির্বিঘ্নে বরিশাল ফিরছে কর্মজীবীদের একাংশ।
অন্যদিকে দীর্ঘ সময়ের যাত্রা এড়াতে অধিকাংশ মানুষ সড়ক পথেই ফিরছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফরে সড়ক পথে দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি যাত্রার সময় সাশ্রয় হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে যাত্রী চাপ বাড়ছে। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের ১১ পয়েন্টকে যানজট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
এসব পয়েন্টে সার্বক্ষণিক পুলিশী কার্যক্রম বৃদ্ধি করায় গাড়ি আটকে সময়ক্ষেপন হচ্ছে না। ফলে সোমবারও মাত্র ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশাল ফিরেছে একাধিক কোম্পানির বাস। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী চাপ আরও বৃদ্ধি পেলেও ঢাকা-বরিশাল রুটে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টায় আসতে পারবে বলে জানান চালকরা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো কর্মজীবীরা বাস ও লঞ্চযাত্রী হয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে।
জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবহনে প্রস্তুত রয়েছে ১৩০ লঞ্চ। ঈদ উপলক্ষ্যে বৃদ্ধি করা হয়নি লঞ্চভাড়া। তবুও কাঙ্খিত যাত্রী পাচ্ছে না লঞ্চগুলো। এক সময়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছাড়া লঞ্চের টিকিট মিলতো না। ঈদ বাদেই স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন চলতো ৯টি করে লঞ্চ। আর ঈদে লাখ লাখ যাত্রী চলাচল করতো নৌপথে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল বিশেষ সার্ভিসের আওতায় ধারণার বাইরে লঞ্চ সংখ্যা বাড়তো। তখন নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি অন্তত ১৪টি লঞ্চ ঈদ সার্ভিসে যুক্ত হতো যাত্রী চাপ সামলাতে। তবে এখন আর সেই জৌলুশ নেই। কিন্তু ঈদের আগে এ রুটে প্রতিদিন দুটি করে লঞ্চ চলতো। ঈদকে কেন্দ্র করে স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় এবার চলবে প্রতিদিন মাত্র ৬টি লঞ্চ।
অন্যদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে বরিশাল থেকে সর্বোচ্চ ২০টি কোম্পানির নামে দেড় শতাধিক দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করতো। পদ্মা সেতু চালুর পর ঈদ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে ৫৫টি কোম্পানির নামে প্রায় ৬০০ দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করেছে। তবে ঈদের সময় এ বাসের এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০০ তে। তারপরও যাত্রীচাপ বাড়তে থাকায় পর্যাপ্ত গাড়ি প্রস্তুত রেখেছে কোম্পানিগুলো। এসব গাড়ি নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের ১১টি স্থানকে যানজট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এসব স্থানে যাতে কোনভাবেই যানবাহন থেমে না থাকে সে জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা কাছ করছে। এ কারণে ফরিদপুরের ভাঙার মোড়, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর ও ভুরঘাটা বাজার, গৌরনদী বাজার, টরকি বন্দর ও টেকেরহাটে কোন জটে আটকেনি বরিশালগামী বাস। ফলে সড়কপথে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছে দক্ষিণাঞ্চলবাসী।
লঞ্চযাত্রী আরিফ বিল্লাহ বলেন, ৯ ঘণ্টা সময় লাগলেও শান্তিতেই বরিশাল এসেছি। এক্ষেত্রে অন্যান্য বছরের চেয়ে ভোগান্তিও কম হয়েছে। বাস যাত্রী সজিব বলেন, সড়কে যানজট নেই। এ কারণে মাত্র ৩ ঘণ্টায় বরিশাল পৌঁছেছি।
সুরভী শিপিংয়ের পরিচালক রিয়াজুল কবির বলেন, এবারে কেবল ২৯ রোজার দিন দিনের বেলায় আমাদের গ্রুপের একটি লঞ্চ ঈদ স্পেশাল সার্ভিস হিসেবে চলবে। বাকি সব নিয়মিত সার্ভিস। লঞ্চের যাত্রী শূন্যের কোঠায় নেমেছে। যাত্রী আর ফিরবে বলে মনে হয় না। কারণ যাত্রীরা কম পয়সায় কম সময়ে সড়কপথে যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় লঞ্চমালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কাঙ্খিত যাত্রী না পাওয়ায় ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে যে লঞ্চ রয়েছে তা দিয়েই যাত্রী সামাল দেওয়া যাবে। গার্মেন্টস ছুটির পর যাত্রী বাড়বে বলে জানান তিনি।
সাকুরা পরিবহণের একটি বাসের সুপারভাইজার হৃদয় জানান, পুলিশী তৎপরতার কারণে বাস কোথাও জটে পড়ছে না। গত বছরের চেয়ে এ বছর সড়ক ব্যবস্থাপনা বেশ ভালো। তবে ছোট গাড়ি সড়কে ঝামেলা করে বলে জানান তিনি।
ঢাকা টু কুয়াকাটা রুটের ইসলাম পরিবহণের চালক সগির হোসেন বলেন, সড়ক গাড়ি চলাচলের অনুকূলে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে যাত্রী চাপ বাড়বে। তখন এ রুটে সময় ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা বাড়তে পারে।
বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, সড়কপথে যাত্রী চাপ অত্যাধিক থাকলেও দুর্ভোগ নেই বললেই চলে। এ চাপ সামাল দিতে পর্যাপ্ত গাড়ি প্রস্তুত রয়েছে।
বরিশাল জেলার গৌরনদী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রসুল মোল্লা বলেন, সড়ক যান চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করছে পুলিশ। এর মাধ্যমে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে চাই।
বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, এবারে যানজটকে জিরো ট্রলারেন্স হিসেবে দেখা হচ্ছে। যানজটের কারণে ঈদ যাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সে দিকটাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির বলেন, বরিশাল নগরীর অভ্যন্তরে থাকা ১১ কিলোমিটার সড়ক নির্বিঘ্ন রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিংয়ের মাধ্যমে যানজট নিরসন করা হচ্ছে।