আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বরিশালে ইংরেজি ভাষায় লেখা ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা করেছে নগরীর জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শোভাযাত্রা শেষে ওই ব্যানার নিয়েই শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। তবে বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ’ বলছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সকালে ইংরেজিতে লেখা ব্যানার নিয়ে নগরীর কলেজ রোড থেকে প্রভাতফেরি নিয়ে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শহীদ মিনার চত্বরে পৌঁছানোর পর ইংরেজি ব্যানার দেখেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত অনেকে। জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত অভিভাবকরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই অভিভাবক বলেন, ভোরে স্কুল প্রাঙ্গণে এসে ইংরেজিতে লেখা ব্যানার দেখেই আমরা বলেছি যে এটা ঠিক হয়নি। কেননা যে বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম, সেই ভাষাকে একভাবে অপমান করা হয়েছে ইংরেজি ভাষায় লেখা ব্যানার দিয়ে প্রভাতফেরি করে।
তারা বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বলতে যার যার ভাষায় মানুষ ভাষাকে সম্মান দেবে। আমরা বাঙালি, আমাদের বাংলা ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। বাঙালি রক্ত দিয়েছে, কোনো ইংরেজ রক্ত দেননি। আমার ভাষার জন্য আন্দোলনের কারণেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি এসেছে। আর সেখানে আমার বাংলা ভাষাই উপেক্ষিত। এই কাজের মধ্যে দিয়ে স্কুলের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা প্রতীয়মান হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘মাতৃভাষা দিবসে এমন কাজ নিজের ভাষাকে অপমান করার শামিল। রাষ্ট্রকে অপমান করা হয়েছে এমন কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার অপমান করে যারা, তারা নিজের মাকে অপমান করে। মূলত এসব স্কুল ব্যবসা করতে এসেছে। দেশের প্রতি এদের কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য নেই।’
গবেষক দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘শহীদ দিবস তো বাঙালি জাতির ত্যাগের দিন। বাংলা ভাষার জন্য কত মানুষ শহীদ হয়েছেন। ইংরেজি ব্যানার নিয়ে বাঙালিদের প্রভাতফেরি করা বাংলা ভাষাকে অপমান করার সমান।’
তিনি বলেন, ‘একজন ইংরেজি ভাষাভাষী যদি ইংরেজি অক্ষরে লেখা ব্যানার নিয়ে শহীদ মিনারে এসে তার মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানান, সেটা একটা বিষয়; কিন্তু যদি একজন বাংলাভাষী ইংরেজি ব্যানার নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন, তাহলে বাংলাকে অপমান করা এবং শহীদদের অমর্যাদা করা হয়।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশালের সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, ‘এটা বাঙালি জাতির সঙ্গে বেইমানি এবং ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। যারা শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন, তাদেরই উচিৎ ছিল ব্যানারটি ছিঁড়ে প্রতিবাদ করা। কারণ এই ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি।
‘যারা এই কাজটি করেছেন, তারা আমাদের ভাষার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তাছাড়া ওই শোভাযাত্রাতে থাকা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপরও এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।’
তবে বিষয়টিকে তুচ্ছ দাবি করে জাহানারা ইসরাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান সালেহ মাহামুদ শেলী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভাষা তো ইংরেজি। তাই ইংরেজি ব্যানার নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়েছে।’