১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করব: সেনাপ্রধান

- আপডেট সময় : ০২:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১০৭ বার পড়া হয়েছে

যে কোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেছেন, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারের প্রতি পরিপূর্ণ সমর্থন থাকবে। ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে সোমবার রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সেনাপ্রধান। গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক এ সংবাদ সংস্থা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। পরে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এ ছাড়া সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখা দেন তিনি।
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাই হোক না কেন, আমি তাঁর পাশে থাকব, যাতে তিনি তাঁর মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. ইউনূস। তিনি ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত। তবে সে জন্য তিনি ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
সেনাপ্রধান বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আমি বলব, এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল।
সেনাপ্রধান জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তিনি প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অস্থির সময়ের পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এক পর্যায়ে তা সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়। আন্দোলনের কেন্দ্রে থাকা ঢাকার সড়কগুলোতে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের নাটকীয় পতনের পর প্রশাসনের কিছু অংশ এখনও সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনী এখনও বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে এগিয়ে এসেছে।
একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার অভ্যুত্থান ঘটায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। এই সরকার দুই বছর দেশ চালায়। পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি রেখে সেনাবাহিনীও তার সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। ইতোমধ্যে কিছু সেনাসদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো কর্মরত সেনাসদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
২০০৯ সাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ৬০০ জনের গুম হওয়ার অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের সাবেক এক বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখতে চান।
সেনাবাহিনীতে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অন্যতম অবদান রাখা দেশ বাংলাদেশ। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে রাখা প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, এটা শুধু তখনই ঘটতে পারে, যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এই মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেনাপ্রধান যে ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।