‘বিয়ের চার মাসেই বিধবা হলাম’

- আপডেট সময় : ০২:১৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
- / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

২০ বছর বয়সি যুবক মো. রাব্বী ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম মাঝির ছেলে। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। চার মাস আগে মাত্র ২০ বছর বয়সে শখ করে ধুমধাম করে বিয়ে দেন বাবা।
দুই মাস পর নতুন সংসার গোছাতে ভোলার চরফ্যাশন থেকে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চলে যান। নতুন বউকে কথা দিয়েছিলেন, তার জন্য নতুন শাড়ি নিয়ে আসবেন; কিন্তু ফেরা হলো না তার। ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিল প্রাণ।
রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রামে কর্মস্থল নির্মাণাধীন ভবন থেকে নিচে নামেন নাশতা খাওয়ার উদ্দেশ্যে। দোকানে ঢোকার আগেই গুলিবিদ্ধ হন রাব্বী। খবর পেয়ে বড় ভাই রাসেল তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।
স্বজনরা রাতেই রাব্বীর মরদেহ চরফ্যাশন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে আনেন।
সোমবার সকালে বাড়ি-সংলগ্ন মালেক মুনসী জামে মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় রাব্বীর স্বজনের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
নিহত রাব্বীর মা জয়তুন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছোট্ট পোলাডারে আদর কইরা অল্প বয়সে বিয়া করাইছিলাম। এহন পুতের বউডার কী হইব? তোমরা আমার পোলাডারে ফিরাইয়া দেও; আমার বাবারে আইন্না দেও। নইলে আমারে বাবার ধারে নিয়া চলো। ওরে ছাড়া ক্যামনে বাঁচমু? কথাগুলো বলতে বলতেই অচেতন হয়ে পড়েন চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় গুলিবিদ্ধ মো. রাব্বির মা। চেতনা ফিরে আসার পর আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাব্বীর বাড়ি গেলে দেখা যায় তার স্ত্রী সুমাইয়া কাঁদছিলেন। আবার কখনো শোকে পাথর হয়ে বসে ছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বিয়ের চার মাসেই বিধবা হইলাম! এহন আমার কী উপায় হইব? ফোনে কইছিল, এইবার বাড়িতে আহনের সময় নতুন শাড়ি নিয়া আইব। মানুষটা আইল লাশ হইয়া।
বড় ভাই রাসেল জানান, রাব্বী তার সঙ্গে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় থাকত। সেখানে তারা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। দুপুরে না খেয়েই কাজ করতে হয়। রাব্বী বলছিল, ‘ভাই, অনেক ক্ষুধা লাগছে। নাস্তা খাইতে যামু।’ এ কথা বলেই সে নিচে নেমে যায়। এরপর গুলিবিদ্ধ হয়।
শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, রাব্বীকে বাড়ি-সংলগ্ন মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।