বরিশালে ফিটনেসবিহীন অবৈধ গাড়ির ছড়াছড়ি

- আপডেট সময় : ০৯:৪৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪
- / ২২৭ বার পড়া হয়েছে

এস.এন.পলাশ : বছরের পর বছর ফিটনেস বিহীন অবৈধ গাড়ি সড়কে দাপিয়ে বেড়ালেও তেমন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনা চোখে পড়ে না। কেবল সড়ক দূর্ঘটনার পরেই শুনতে হয় গাড়িটির কাগজপত্র সঠিক ছিলনা কিংবা ফিটনেস নেই। এমনকি ড্রাইভারের লাইসেন্সও নেই।
এ সকল গাড়িগুলো হলো- বাস, মিনিবাস, ট্রাক, পিকআপ, মিনি পিক-আপ, মাইক্রোবাস ও থ্রী হুইলার। ফিটনেস বিহীন অবৈধ এ সকল গাড়িতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রীবাহি এসকল যানবাহনে ট্রাফিক পুলিশের শতভাগ কার্যকরী পদক্ষেপেই কমাতে পারে সড়ক দূর্ঘটনা বলে মনে করেন সুশীল সমাজ। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্নকথা।
বরিশাল নগর ও জেলায় চলাচলরত কয়েক হাজার গাড়ির মধ্যে ফিটনেস বিহীন অবৈধ গাড়ির ছড়াছড়ি। এ সকল অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও তেমন কোনো কাজে আসছেনা।
বিআরটিএ বরিশাল দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বরিশালে নিবন্ধন হওয়া ৭৪০ ট্রাকের মধ্যে ৩৭০টির কাগজ-পত্রই মেয়াদোর্ত্তীর্ণ। এগুলো আবার বীরদর্পে চলছে সড়ক-মহাসড়কে। একই অবস্থা বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে। বরিশালে নিবন্ধিত প্রায় ৮০০ বাস-মিনিবাসের মধ্যে ৩৪০টির ট্যাক্স টোকেন রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে বহু আগে।
বরিশালের দুই বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, নথুল্লাবাদ মালিক সমিতির অধীনে মোট বাস-মিনিবাস রয়েছে ২০০টি। অভ্যন্তরীন বিভিন্ন রুটে এগুলো দৈনিক আড়াইশ থেকে তিনশো ট্রিপ দেয়। রূপাতলী বাস মালিক সমিতির অধীনে থাকা ১১৪টি বাস-মিনিবাস দৈনিক ট্রিপ দেয় ৩শ’র বেশি। এই হিসাবে গত পাঁচ মাসে এসব বাস-মিনিবাস অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে লাখো বারের বেশি যাতায়াত করেছে। প্রতিবারই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে আসা যাওয়া করা এই বাস-মিনিবাসগুলোর মধ্যে ৩৪০টির বৈধ রুট পারমিট কিংবা হালনাগাদ ট্যাক্স-টোকেন নেই। একই অবস্থা ট্রাকের ক্ষেত্রে। এখানে বিআরটিএ’র নিবন্ধন পাওয়া ৭৩৮ ট্রাকের মধ্যে ৩৬০টির নেই সড়কে চলাচলের বৈধ কাগজপত্র। এছাড়া বরিশালে রেন্টে চলা সাড়ে তিনশো মাইক্রোবাসের বেশিরভাগ গাড়ির ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন নেই।
বরিশাল নগরীতে সবচেয়ে বেশি চলাচলকারী প্রায় বিশ হাজার থ্রী হুইলার চলে বিট বাণিজ্যে। কাগজপত্র কিংবা ফিটনেস না থাকলেও থ্রী হুইলার মালিক সমিতির সভাপতি শাহরিয়ার আহমেদ বাবু ও সাধারন সম্পাদক মুশফিকুর রহমান দুলালের মাধ্যমে চলাচল করে এই অবৈধ গাড়ি গুলো।
বরিশাল থ্রি-হুইলার মালিক সমিতির এক সদস্য বলেন, সড়কে চলতে হলে ট্রাফিক বিভাগকে খুশি রাখতে হয়। লেনদেনের বিষয়ে নাইবা বললাম, পুলিশ টহলের জন্য গাড়ি দিতে হয়। ভাড়ায় চলা প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস মালিকদেরও দিতে হয় গাড়ি। সাথে মাসিক বিটের টাকা। কোনো কারণে দিতে ব্যর্থ হলে দেয় মামলা।
এদিকে পিক-আপ মিনি পিকআপ গুলো চলাচল করে সার্জেন্টদের বিট দিয়ে। নগরীর বাংলাবাজার এলাকার পিক-আপ ড্রাইভার আলাউদ্দিন বলেন, অনেক বছর যাবত আমার গাড়ি ডেট ফেইল। নবায়ন করাতে লাখ টাকার উপরে লাগবে তাই মাসিক এক হাজার টাকা বিট দিয়েই চলি।
একই কথা বলেন ট্রাক ড্রাইভার মোসলেম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি যে ট্রাকটি চালাই সেটা নবায়ন করাতে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাগবে তাই ট্রাকের মালিক বিটের মাধ্যমে চালায়। তাছাড়া গাড়ির কাগজপত্র আছে কিনা সেটা দেখার আগে দেখে গাড়ি বিটের আওতায় কিনা। এজন্য গাড়ির কাগজপত্র ঠিকঠাকের আগে বিটের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, পরিবহনে অভিযান চালাতে হলে সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশের প্রয়োজন হয়। ইচ্ছে হলেই এসকল গাড়িতে আমরা অভিযানন পরিচালনা করতে পারিনা।
সুশাসনের জন্য নাগরীক(সুজন) এর বরিশাল জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, যেখানে টুপাইসের মাধ্যমে অবৈধকে বৈধ করা যায় সেখানে এসকল যানবাহনকে পুরোপুরি ডিজিটাইলেশনের মাধ্যমে আনা জরুরী। অন্যথায় এগুলো রোধ করা সম্ভব নয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি তানভির আরাফাত বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। গত মাসেও প্রায় শতাধিক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল সম্ভব নয়। এসব গাড়ি চললে জেলায় চলতে পারে।
তাছাড়া অনেকটা আক্ষেপ করে এই কর্মকর্তা বলেন, বিআরটিএ অফিসের কেন কোনো ভূমিকা নেই? তাঁরাও তো পারে অভিযান চালাতে।
এদিকে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার তেমন জানা ছিলোনা। তবে এখন অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ গাড়ি গুলোকে আইনের আওতায় আনবো।’’