০৫:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে নৌপুলিশের মতবিনিময়

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৪:২৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১০০ বার পড়া হয়েছে

রুপন কর অজিত: বরিশালে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশের আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ ১৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় বরিশাল লঞ্চঘাটস্থ বিআইডব্লিউটিএ এর টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নৌ পুলিশ সুপার মোঃ কফিল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল, পিপিএম (বার)।

সভাটি সঞ্চালনা করেন, বরিশাল অঞ্চলের নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো: ইমরান হোসেন মোল্লা পিপিএম।

সভায় নৌযান সংশ্লিষ্ট মালিক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন, পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়।

নৌপুলিশের কর্মকর্তারা নৌপথে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং নৌযান চলাচলের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা, জাল ব্যবহার, সকলকে একত্রে কাজ করার আহবানও জানানো হয় সভা থেকে।

মতবিনিময় সভায় বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল পিপিএম (বার) বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, এবং সংস্কৃতির মূল ভিত্তি নদী। “মাছে ভাতে বাঙালি” হিসেবে আমাদের যে পরিচয়, তা নদীর ওপর নির্ভরশীল। তাই নদীগুলো দূষণমুক্ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে, নদীগুলো দখল ও দূষণের কারণে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এর ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা মানবজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে আমরা নদীগুলোকে রক্ষা করতে পারব। যদি আমরা নদীগুলোকে বাঁচাতে পারি, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে। শুধু সরকার নয়, আমাদের প্রত্যেকেরই নদী দূষণমুক্ত রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

এসময় তিনি মৎসজীবীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, নদী থেকে মাছ ধরার সময় তাদের “ঝাটকা নিধন” থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। ঝাটকা মাছ নিধন নদীর মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে মাছের সংখ্যা হ্রাস পায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।

তিনি আরো বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশিল হয়ে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নদীগুলো দূষণ মুক্ত করতে হবে।কারণ, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আর দেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।

সভায় বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশ সুপার মোঃ কফিল উদ্দিন বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি সরাসরি দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, ও জীবনযাত্রার মানের উপর প্রভাব ফেলে। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে এবং তা ক্রমশ ভরাট হলে, জলাবদ্ধতা, বন্যা, এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এজন্য নদীর নাব্যতা রক্ষায় সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। এটি শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়,প্রতিটি নাগরিক, মৎসজীবী, এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সচেতন অংশগ্রহণই পারে নদী রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

তিনি আরো বলেন, নদীর মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো “ঝাটকা নিধন” ও অবৈধ জাল ব্যবহার। ঝাটকা হলো ছোট ইলিশ মাছ, যা প্রজনন ও বৃদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধরা হয়। ঝাটকা নিধন মৎস্যসম্পদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা দেশের অর্থনীতির উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। মৎসজীবীদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়াও, অবৈধ জাল ব্যবহার নদীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব জাল সাধারণত খুব ছোট মাছ থেকে শুরু করে সব ধরনের জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে মাছের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে মৎসসম্পদের পুনরুৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।

এই কারণেই মৎসজীবীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন ঝাটকা নিধন থেকে বিরত থাকে এবং কোনোভাবেই অবৈধ জাল ব্যবহার না করে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলেও, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া নদীর নাব্যতা রক্ষা করা এবং মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

এসময় সভায় বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট আজিজুল হক আক্কাস, বাল্কহেড মালিক সমিতির প্রতিনিধি মো: স্বপন, বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: রিপন হাওলাদার, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি মো: আলী হোসেন, বরিশাল নৌ সদর থানার পুলিশ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Barisal Sangbad

বরিশাল সংবাদের বার্তা কক্ষে আপনাকে স্বাগতম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

বরিশালে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে নৌপুলিশের মতবিনিময়

আপডেট সময় : ০৪:২৪:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রুপন কর অজিত: বরিশালে নৌযান মালিক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশের আয়োজনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ ১৯ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় বরিশাল লঞ্চঘাটস্থ বিআইডব্লিউটিএ এর টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নৌ পুলিশ সুপার মোঃ কফিল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল, পিপিএম (বার)।

সভাটি সঞ্চালনা করেন, বরিশাল অঞ্চলের নৌ পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো: ইমরান হোসেন মোল্লা পিপিএম।

সভায় নৌযান সংশ্লিষ্ট মালিক, শ্রমিক ও মৎস্যজীবীদের সাথে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন, পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়।

নৌপুলিশের কর্মকর্তারা নৌপথে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং নৌযান চলাচলের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা, জাল ব্যবহার, সকলকে একত্রে কাজ করার আহবানও জানানো হয় সভা থেকে।

মতবিনিময় সভায় বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তফা কামাল পিপিএম (বার) বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি, এবং সংস্কৃতির মূল ভিত্তি নদী। “মাছে ভাতে বাঙালি” হিসেবে আমাদের যে পরিচয়, তা নদীর ওপর নির্ভরশীল। তাই নদীগুলো দূষণমুক্ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে, নদীগুলো দখল ও দূষণের কারণে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এর ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা মানবজীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এবং পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে আমরা নদীগুলোকে রক্ষা করতে পারব। যদি আমরা নদীগুলোকে বাঁচাতে পারি, তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত থাকবে। শুধু সরকার নয়, আমাদের প্রত্যেকেরই নদী দূষণমুক্ত রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

এসময় তিনি মৎসজীবীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, নদী থেকে মাছ ধরার সময় তাদের “ঝাটকা নিধন” থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। ঝাটকা মাছ নিধন নদীর মাছের প্রজনন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে মাছের সংখ্যা হ্রাস পায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।

তিনি আরো বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশিল হয়ে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নদীগুলো দূষণ মুক্ত করতে হবে।কারণ, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে, আর দেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে।

সভায় বরিশাল অঞ্চলের নৌপুলিশ সুপার মোঃ কফিল উদ্দিন বলেন, নদীর নাব্যতা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এটি সরাসরি দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, ও জীবনযাত্রার মানের উপর প্রভাব ফেলে। নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে এবং তা ক্রমশ ভরাট হলে, জলাবদ্ধতা, বন্যা, এবং পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এজন্য নদীর নাব্যতা রক্ষায় সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে। এটি শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়,প্রতিটি নাগরিক, মৎসজীবী, এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সচেতন অংশগ্রহণই পারে নদী রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে।

তিনি আরো বলেন, নদীর মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো “ঝাটকা নিধন” ও অবৈধ জাল ব্যবহার। ঝাটকা হলো ছোট ইলিশ মাছ, যা প্রজনন ও বৃদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার আগেই ধরা হয়। ঝাটকা নিধন মৎস্যসম্পদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা দেশের অর্থনীতির উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। মৎসজীবীদের এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এছাড়াও, অবৈধ জাল ব্যবহার নদীর বাস্তুতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব জাল সাধারণত খুব ছোট মাছ থেকে শুরু করে সব ধরনের জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে মাছের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে মৎসসম্পদের পুনরুৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।

এই কারণেই মৎসজীবীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন ঝাটকা নিধন থেকে বিরত থাকে এবং কোনোভাবেই অবৈধ জাল ব্যবহার না করে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারি এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলেও, স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া নদীর নাব্যতা রক্ষা করা এবং মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।

এসময় সভায় বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব এডভোকেট আজিজুল হক আক্কাস, বাল্কহেড মালিক সমিতির প্রতিনিধি মো: স্বপন, বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: রিপন হাওলাদার, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি মো: আলী হোসেন, বরিশাল নৌ সদর থানার পুলিশ সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।