০৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালে দাফনের প্রায় ৪ বছর পর ব্যবসায়ীর মরদেহ উত্তোলন

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৯৫ বার পড়া হয়েছে
বরিশালের বানারীপাড়ায় আদালতের নির্দেশে তিন বছর আট মাস পর মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের জন্য আব্দুস সালাম গোলন্দাজ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের গোলন্দাজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) তার লাশ (মাথার খুলি, বুক, হাত ও পায়ের হাড়গোড়) উত্তোলন করা হয়।

লাশ উত্তোলনের সময় বানারীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্র, হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোমিন উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাহিম আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আব্দুস সালাম গোলন্দাজের বোন ও মামলার বাদী নাসিমা ইয়াসমিন, ভাই আলাউদ্দিন গোলন্দাজ, ছেলে সাব্বির ও মেয়ে সামিয়া আক্তার মিমসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পর সালামকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী, জামাতাসহ চারজনকে আসামি করে তার বোন নাসিমা ইয়াসমিন বাদী হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ১২ জুন মামলাটি বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন সালামের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০), তার মেয়ে জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ (৩৮), মো. মাসুম (৩৮) ও স্ত্রীর ভাই দুলাল হাওলাদার (৫৩)।মামলা সূত্রে জানা যায়, সালাম গোলন্দাজের সঙ্গে ১ নম্বর আসামি সাবিনা ইয়াসমিনের বিয়ের পর তার গর্ভে তিন মেয়ে ও এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়।

পরবর্তীতে বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানার সঙ্গে ২ নম্বর আসামি খালিদ মাহমুদ সোহাগের বিবাহ হয় এবং এক মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিথিলা ফারজানা তার মা ও স্বামীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং স্বামী সোহাগকে তালাক দেন। ব্যাপারটি সালাম গোলন্দাজ জানলে স্ত্রীকে এ অনৈতিক পথ থেকে ফেরানোর জন্য শাসন করাসহ বিভিন্ন আদেশ-উপদেশ দেন।
স্বামীর অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জামাতার সঙ্গে নির্বিঘ্নে পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যেতে সাবিনা ইয়াসমিন তাকে হত্যা পরিকল্পনাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। আসামি সাবিনা ইয়াসমিন অন্য আসামিদের সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতিমূলক দলিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাবরেজিস্ট্রারকে বাসায় নিয়ে অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে দাতা দেখিয়ে এবং তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গ্রহীতা হয়ে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর ছয় একর জমির হেবা দলিল তৈরি করেন।

পরবর্তীতে অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ পরকীয়া প্রেমের বাধা দূর করার জন্য অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা হতে পরদিন ৯ জানুয়ারি সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন চেতনানাশক ওষুধ (বিষ) সেবন করিয়ে এবং এক পর্যায়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আসামিরা সকালবেলা প্রচার করেন, সালাম গোলন্দাজ রাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আসামিরা তখন তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করেন।

পরবর্তীতে আসামিদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় সালাম গোলন্দাজকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এ মামলা করা হয়। 

বাদীর দাবি, তার ভাইয়ের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করলে তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হবে। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক শারমিন সুলতানা সুমী ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম গোলন্দাজের প্রকৃত মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তার লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুনতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্র বলেন, আদালতের নির্দেশক্রমে কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের সময় তিনি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।

এ বিষয়ে হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বানারীপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোমিন উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ী সালাম গোলন্দাজের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাহিম আরিফ বলেন, লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Barisal Sangbad

বরিশাল সংবাদের বার্তা কক্ষে আপনাকে স্বাগতম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

বরিশালে দাফনের প্রায় ৪ বছর পর ব্যবসায়ীর মরদেহ উত্তোলন

আপডেট সময় : ০২:২৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বরিশালের বানারীপাড়ায় আদালতের নির্দেশে তিন বছর আট মাস পর মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের জন্য আব্দুস সালাম গোলন্দাজ (৬০) নামের এক ব্যবসায়ীর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের গোলন্দাজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) তার লাশ (মাথার খুলি, বুক, হাত ও পায়ের হাড়গোড়) উত্তোলন করা হয়।

লাশ উত্তোলনের সময় বানারীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্র, হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোমিন উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাহিম আরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আব্দুস সালাম গোলন্দাজের বোন ও মামলার বাদী নাসিমা ইয়াসমিন, ভাই আলাউদ্দিন গোলন্দাজ, ছেলে সাব্বির ও মেয়ে সামিয়া আক্তার মিমসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পর সালামকে হত্যার অভিযোগে তার স্ত্রী, জামাতাসহ চারজনকে আসামি করে তার বোন নাসিমা ইয়াসমিন বাদী হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে ১২ জুন মামলাটি বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন সালামের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৫০), তার মেয়ে জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ (৩৮), মো. মাসুম (৩৮) ও স্ত্রীর ভাই দুলাল হাওলাদার (৫৩)।মামলা সূত্রে জানা যায়, সালাম গোলন্দাজের সঙ্গে ১ নম্বর আসামি সাবিনা ইয়াসমিনের বিয়ের পর তার গর্ভে তিন মেয়ে ও এক ছেলেসন্তানের জন্ম হয়।

পরবর্তীতে বড় মেয়ে মিথিলা ফারজানার সঙ্গে ২ নম্বর আসামি খালিদ মাহমুদ সোহাগের বিবাহ হয় এবং এক মেয়েসন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে সাবিনা ইয়াসমিন ও তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিথিলা ফারজানা তার মা ও স্বামীর অনৈতিক কর্মকাণ্ড হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং স্বামী সোহাগকে তালাক দেন। ব্যাপারটি সালাম গোলন্দাজ জানলে স্ত্রীকে এ অনৈতিক পথ থেকে ফেরানোর জন্য শাসন করাসহ বিভিন্ন আদেশ-উপদেশ দেন।
স্বামীর অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জামাতার সঙ্গে নির্বিঘ্নে পরকীয়া প্রেম চালিয়ে যেতে সাবিনা ইয়াসমিন তাকে হত্যা পরিকল্পনাসহ নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। আসামি সাবিনা ইয়াসমিন অন্য আসামিদের সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতিমূলক দলিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাবরেজিস্ট্রারকে বাসায় নিয়ে অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে দাতা দেখিয়ে এবং তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন গ্রহীতা হয়ে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর ছয় একর জমির হেবা দলিল তৈরি করেন।

পরবর্তীতে অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ ও সাবিনা ইয়াসমিন এবং তার জামাতা খালিদ মাহমুদ সোহাগ পরকীয়া প্রেমের বাধা দূর করার জন্য অসুস্থ সালাম গোলন্দাজকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টা হতে পরদিন ৯ জানুয়ারি সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন চেতনানাশক ওষুধ (বিষ) সেবন করিয়ে এবং এক পর্যায়ে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। আসামিরা সকালবেলা প্রচার করেন, সালাম গোলন্দাজ রাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আসামিরা তখন তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করেন।

পরবর্তীতে আসামিদের আচার-আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহের সৃষ্টি হওয়ায় সালাম গোলন্দাজকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে এ মামলা করা হয়। 

বাদীর দাবি, তার ভাইয়ের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করলে তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হবে। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক শারমিন সুলতানা সুমী ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম গোলন্দাজের প্রকৃত মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তার লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুনতাহসিন তাসমিম রহমান অনিন্দ্র বলেন, আদালতের নির্দেশক্রমে কবর খুঁড়ে লাশ উত্তোলনের সময় তিনি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন।

এ বিষয়ে হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা বানারীপাড়া থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোমিন উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ী সালাম গোলন্দাজের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফাহিম আরিফ বলেন, লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।