০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে একতলা লঞ্চ, মানা হচ্ছে না শর্ত

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪
  • / ২৪৭ বার পড়া হয়েছে

বরিশাল অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ নদীপথ রয়েছে এক হাজার ২০০ কিলোমিটার। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি লঞ্চ মালিক শ্রমিকদের। নদ-নদী অশান্ত থাকায় এই সময়কে বিপজ্জনক মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময়ে সার্ভে সনদ ছাড়া ছোট একতলা লঞ্চগুলোর চলাচলে অনুমতি মিলে না। কিন্তু বরিশালে মিলেছে ভিন্ন চিত্র। সার্ভে সনদ ছাড়াই চলছে বেশ কয়েকটি একতলা লঞ্চ।

সরেজমিন দেখা যায়, বরিশাল আধুনিক নৌবন্দর থেকে আন্তঃজেলা নৌ-রুটগুলোতে প্রতিদিন সহস্রাধিক যাত্রী জেলা-উপজেলাগুলোতে আসা-যাওয়া করছে এসব লঞ্চে করে। ৯০ দিনের ওই দুর্যোগপূর্ণ মৌসুমেও নৌ ট্র্যাফিক ও সার্ভে সনদের শর্তাবলি না মেনে যাত্রী পরিবহন করে চলছে লঞ্চগুলো।

এ বিষয়ে বরিশাল সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. করিম বলেন, বিপদজ্জনক মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ একতলা লঞ্চের সার্ভে সনদ দেওয়া হয় না। সার্ভে সনদের জন্য প্রায় ১৫ থেকে ১৬টি শর্তাবলির প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়। আর এসব সার্ভে সনদ দেওয়া হয় বরিশাল ও ঢাকা থেকে। এরপর সেসব শর্তাবলি পরবর্তীতে লঞ্চ মালিকরা মেনে চলে কিনা তা নিশ্চিত করে নৌবন্দরের ট্র্যাফিক বিভাগ।

তিনি আরও বলেন, সার্ভে সনদ থাকলেই লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহনের জন্য শিডিউল পাবে। একই সঙ্গে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এর ৯ ধারা অনুযায়ী সার্ভে সনদ প্রাপ্ত হয়ে লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহন করবে।

মো. করিম বলেন, সনদ পেতে হলে, লঞ্চের যাত্রী বহন ক্ষমতা, নৌযান নির্মাণকাল ও টনেজ, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ও অন্যান্য তথ্যাদি, মাস্টার, নাবিক, লঞ্চের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা, ইঞ্জিন, পাম্প, অগ্নি নির্বাপণী ব্যবস্থা, ডকইয়ার্ড, কনজারভেন্সি চার্জসহ (নদীতে চলাচলের জন্য) শর্তাবলি নিশ্চিত করতে হয় মালিকদেরকে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, লঞ্চ চলাচলে নির্দিষ্ট কিছু শর্তের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বরিশাল নৌবন্দর থেকে চলাচলরত একতলা লঞ্চগুলোতে ঝড়ো মৌসুমেও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, দুর্যোগ মুহূর্তে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামাদির স্বল্পতা ও ব্যবহার অনুপযোগী থাকা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নাবিক না থাকা, গভীরতায় গরমিলসহ ঝুঁকিপূর্ণভাবে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে।

এ নিয়ে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, ‘মিলন এক্সপ্রেস’ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১শ ৮০ জন। এ লঞ্চে লাইফ বয়া ৫৫টি থাকার নিয়ম থাকলেও নেই অর্ধেকও। যা রয়েছে তা আবার মানহীন। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ৩টি থাকার নিয়ম থাকলেও রয়েছে মাত্র একটি। তাও অনেক পুরানো। নাবিক ৯ জন থাকার নিয়ম থাকলেও রয়েছে ৩/৪জন।

এ বিষয়ে লঞ্চটির মাস্টার স্বপন বলেন, যাত্রী যা হয় খারাপ না। কিন্তু মালিক পক্ষ খরচ কমানোর জন্য তেমন কিছু করে না। আর বর্ষার মৌসুম ছাড়া আমাদের তেমন কোন ঝুঁকি নেই। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আপনারা এসেছেন এখন তাদের কানে পানি যাবে।

এ বিষয়ে জানতে মিলন লঞ্চের মালিক ওসমান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ম্যানেজার মকবুল হোসেন বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমে তেমন যাত্রী পাই না। এছাড়া শুকনা মৌসুমে নদীতে ডুবোচরের কারণে ঠিকমতো চলাচল করতে পারি না। সার্ভে সনদ অনুযায়ী লঞ্চটির গভীরতা ১.৮৩মিটার থাকার কথা থাকলেও তা কম রয়েছে কেন জানতে চাইলে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, আমরা এখন যাত্রী সংকটে রয়েছি।

এদিকে ‘সাইপ্রাস’ নামক একটি লঞ্চের অবস্থা আরও নাজুক। সার্ভে সনদের ১৪/১৫ শর্তাবলির অর্ধেকও মানা হচ্ছে না লঞ্চটিতে।

এ ব্যাপারে নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

নৌ-নিরাপত্তা ট্র্যাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, সার্ভে সনদ দেয় নৌ-মন্ত্রণালয় আমরা শুধু দেখভাল করি। সার্ভে সনদের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, হয়ত সব নিয়মকানুন মানে না লঞ্চ গুলো। তবে সার্ভে সনদ আছে।

সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে ভোলার রুটে কাক ডাকা ভোর থেকে চলাচল করে এম এল মুনির, উপকূল, বিসমিল্লাহ, মুন্নী এক্সপ্রেস, সঞ্চিতা, পারভীন, রাকিন, মেহেন্দিগঞ্জ রুটে চলাচল করে গ্রিন ওয়াটার, সূচনা, আল আফছার, সায়মুন, রাতুল, হিজলা রুটে রয়েছে সোহেলি, আল মদিনা, ইনজাম, বোরহানউদ্দিন রুটে ধানসিঁড়ি, লক্ষ্মীপুর রুটে পারিজাত, জনতা ও বরগুনাসহ বাকেরগঞ্জ রুট মিলিয়ে ত্রিশটি একতলা লঞ্চ চলাচল করে।

এসব বিষয়ে বরিশাল লঞ্চমালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুল হক আক্কাস বলেন, সার্ভে সনদ দেওয়ার সময় সবকিছু দেখেই সনদ দেয়। হয়ত পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, লাইফ সার্পোট সরঞ্জামাদি ও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতির কিছু ঘাটতি রয়েছে। যেগুলোর দাম হাতের নাগালে হলেও ক্রয় করেন না অনেক লঞ্চ মালিক।

ট্যাগস :

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Barisal Sangbad

বরিশাল সংবাদের বার্তা কক্ষে আপনাকে স্বাগতম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

বরিশালে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলছে একতলা লঞ্চ, মানা হচ্ছে না শর্ত

আপডেট সময় : ০৭:৩৮:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

বরিশাল অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ নদীপথ রয়েছে এক হাজার ২০০ কিলোমিটার। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি লঞ্চ মালিক শ্রমিকদের। নদ-নদী অশান্ত থাকায় এই সময়কে বিপজ্জনক মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময়ে সার্ভে সনদ ছাড়া ছোট একতলা লঞ্চগুলোর চলাচলে অনুমতি মিলে না। কিন্তু বরিশালে মিলেছে ভিন্ন চিত্র। সার্ভে সনদ ছাড়াই চলছে বেশ কয়েকটি একতলা লঞ্চ।

সরেজমিন দেখা যায়, বরিশাল আধুনিক নৌবন্দর থেকে আন্তঃজেলা নৌ-রুটগুলোতে প্রতিদিন সহস্রাধিক যাত্রী জেলা-উপজেলাগুলোতে আসা-যাওয়া করছে এসব লঞ্চে করে। ৯০ দিনের ওই দুর্যোগপূর্ণ মৌসুমেও নৌ ট্র্যাফিক ও সার্ভে সনদের শর্তাবলি না মেনে যাত্রী পরিবহন করে চলছে লঞ্চগুলো।

এ বিষয়ে বরিশাল সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. করিম বলেন, বিপদজ্জনক মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ একতলা লঞ্চের সার্ভে সনদ দেওয়া হয় না। সার্ভে সনদের জন্য প্রায় ১৫ থেকে ১৬টি শর্তাবলির প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়। আর এসব সার্ভে সনদ দেওয়া হয় বরিশাল ও ঢাকা থেকে। এরপর সেসব শর্তাবলি পরবর্তীতে লঞ্চ মালিকরা মেনে চলে কিনা তা নিশ্চিত করে নৌবন্দরের ট্র্যাফিক বিভাগ।

তিনি আরও বলেন, সার্ভে সনদ থাকলেই লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহনের জন্য শিডিউল পাবে। একই সঙ্গে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এর ৯ ধারা অনুযায়ী সার্ভে সনদ প্রাপ্ত হয়ে লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহন করবে।

মো. করিম বলেন, সনদ পেতে হলে, লঞ্চের যাত্রী বহন ক্ষমতা, নৌযান নির্মাণকাল ও টনেজ, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ও অন্যান্য তথ্যাদি, মাস্টার, নাবিক, লঞ্চের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা, ইঞ্জিন, পাম্প, অগ্নি নির্বাপণী ব্যবস্থা, ডকইয়ার্ড, কনজারভেন্সি চার্জসহ (নদীতে চলাচলের জন্য) শর্তাবলি নিশ্চিত করতে হয় মালিকদেরকে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, লঞ্চ চলাচলে নির্দিষ্ট কিছু শর্তের কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বরিশাল নৌবন্দর থেকে চলাচলরত একতলা লঞ্চগুলোতে ঝড়ো মৌসুমেও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, দুর্যোগ মুহূর্তে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামাদির স্বল্পতা ও ব্যবহার অনুপযোগী থাকা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নাবিক না থাকা, গভীরতায় গরমিলসহ ঝুঁকিপূর্ণভাবে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে।

এ নিয়ে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, ‘মিলন এক্সপ্রেস’ লঞ্চে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১শ ৮০ জন। এ লঞ্চে লাইফ বয়া ৫৫টি থাকার নিয়ম থাকলেও নেই অর্ধেকও। যা রয়েছে তা আবার মানহীন। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ৩টি থাকার নিয়ম থাকলেও রয়েছে মাত্র একটি। তাও অনেক পুরানো। নাবিক ৯ জন থাকার নিয়ম থাকলেও রয়েছে ৩/৪জন।

এ বিষয়ে লঞ্চটির মাস্টার স্বপন বলেন, যাত্রী যা হয় খারাপ না। কিন্তু মালিক পক্ষ খরচ কমানোর জন্য তেমন কিছু করে না। আর বর্ষার মৌসুম ছাড়া আমাদের তেমন কোন ঝুঁকি নেই। তিনি আরও বলেন, যেহেতু আপনারা এসেছেন এখন তাদের কানে পানি যাবে।

এ বিষয়ে জানতে মিলন লঞ্চের মালিক ওসমান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ম্যানেজার মকবুল হোসেন বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমে তেমন যাত্রী পাই না। এছাড়া শুকনা মৌসুমে নদীতে ডুবোচরের কারণে ঠিকমতো চলাচল করতে পারি না। সার্ভে সনদ অনুযায়ী লঞ্চটির গভীরতা ১.৮৩মিটার থাকার কথা থাকলেও তা কম রয়েছে কেন জানতে চাইলে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। বলেন, আমরা এখন যাত্রী সংকটে রয়েছি।

এদিকে ‘সাইপ্রাস’ নামক একটি লঞ্চের অবস্থা আরও নাজুক। সার্ভে সনদের ১৪/১৫ শর্তাবলির অর্ধেকও মানা হচ্ছে না লঞ্চটিতে।

এ ব্যাপারে নৌবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

নৌ-নিরাপত্তা ট্র্যাফিক বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, সার্ভে সনদ দেয় নৌ-মন্ত্রণালয় আমরা শুধু দেখভাল করি। সার্ভে সনদের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, হয়ত সব নিয়মকানুন মানে না লঞ্চ গুলো। তবে সার্ভে সনদ আছে।

সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে ভোলার রুটে কাক ডাকা ভোর থেকে চলাচল করে এম এল মুনির, উপকূল, বিসমিল্লাহ, মুন্নী এক্সপ্রেস, সঞ্চিতা, পারভীন, রাকিন, মেহেন্দিগঞ্জ রুটে চলাচল করে গ্রিন ওয়াটার, সূচনা, আল আফছার, সায়মুন, রাতুল, হিজলা রুটে রয়েছে সোহেলি, আল মদিনা, ইনজাম, বোরহানউদ্দিন রুটে ধানসিঁড়ি, লক্ষ্মীপুর রুটে পারিজাত, জনতা ও বরগুনাসহ বাকেরগঞ্জ রুট মিলিয়ে ত্রিশটি একতলা লঞ্চ চলাচল করে।

এসব বিষয়ে বরিশাল লঞ্চমালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুল হক আক্কাস বলেন, সার্ভে সনদ দেওয়ার সময় সবকিছু দেখেই সনদ দেয়। হয়ত পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, লাইফ সার্পোট সরঞ্জামাদি ও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রপাতির কিছু ঘাটতি রয়েছে। যেগুলোর দাম হাতের নাগালে হলেও ক্রয় করেন না অনেক লঞ্চ মালিক।