১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে কি কি বিখ্যাত?

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৬১ বার পড়া হয়েছে

বরিশাল ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এর বিভিন্ন স্থান, ঐতিহ্যবাহী খাবার, নদী ও উৎসবগুলি বরিশালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। এখানে বরিশালের কিছু বিখ্যাত বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. নদ-নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বরিশাল “বাংলার ভেনিস” নামেও পরিচিত। এটি নদী-বিধৌত অঞ্চল, এবং এখানকার প্রধান নদীগুলি হল:

কীর্তনখোলা নদী: বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদীটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ নদীগুলো বরিশালের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে। নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখা বা নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।

২. ঐতিহাসিক স্থানসমূহ

দুর্গাসাগর দীঘি: বরিশালের বাবুগঞ্জে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় দীঘি। মহারাজা শিবনারায়ণ ১৭৮০ সালে এ দীঘি খনন করেছিলেন, যা বরিশালের একটি ঐতিহাসিক ও পর্যটনকেন্দ্র।

গুঠিয়া মসজিদ (বায়তুল আমান জামে মসজিদ): এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি এর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নকশার জন্য বিখ্যাত।

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি: এই প্রাচীন জমিদার বাড়িটি বরিশালের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। এটি জমিদারদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপনের এক অনন্য উদাহরণ।

৩. ভাষা ও সাহিত্য

বরিশালকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরা হয়। অনেক খ্যাতিমান সাহিত্যিকের জন্মস্থান এটি, যেমন:

জীবনানন্দ দাশ: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশালের সন্তান। তার কবিতায় বরিশালের প্রকৃতি ও জীবনচিত্র গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

অন্নদাশঙ্কর রায়: একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক, কবি এবং লেখক। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মে বরিশালের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

৪. বরিশালের খাবার

বরিশালের খাদ্য সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ। এখানকার বেশ কিছু খাবার খুবই জনপ্রিয়:

ইলিশ মাছ: পদ্মা এবং মেঘনা নদীর ইলিশ মাছ বরিশালে অত্যন্ত বিখ্যাত। বরিশালবাসীরা ইলিশ মাছ দিয়ে বিভিন্ন পদ রান্না করে।

পিঠা-পুলি: বিশেষত শীতকালে বরিশালের পিঠাগুলো খুবই প্রসিদ্ধ। চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের অংশ।

৫. ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও সংস্কৃতি

বরিশালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উৎসবগুলো এখানকার জীবনধারার একটি অংশ।

বর্ষবরণ উৎসব: পহেলা বৈশাখে বরিশালে বিশেষভাবে বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়।

চড়ক পূজা: ঐতিহ্যবাহী এই হিন্দু উৎসবটি বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে পালন করা হয়।

৬. স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

বরিশাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বরিশাল শহর এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। যুদ্ধকালীন বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ এখানে তৈরি হয়েছে, যেমন:

স্বাধীনতা জাদুঘর: বরিশালে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল ও স্মৃতির সংরক্ষণ করা হয়েছে এই জাদুঘরে।

৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের শিক্ষার একটি বড় কেন্দ্র।

ব্রজমোহন কলেজ: এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম কলেজগুলোর মধ্যে একটি। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি বরিশালের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

৮. সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

বরিশালের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নাটক, সংগীত, নৃত্য, এবং শিল্পকলা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপ এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবনে সক্রিয়।

বরিশালের এই বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য, প্রকৃতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি একসঙ্গে মিলে এ অঞ্চলকে অনন্য করে তুলেছে।

 

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Zehad Rana

The IT Incharge of a news portal, like Barisal Sangbad, is responsible for overseeing the technology infrastructure, ensuring smooth operation of the website, maintaining servers, securing data, and troubleshooting technical issues. This role is crucial in managing the digital aspects of the news portal, including updates, cybersecurity, and user experience. They also work closely with developers and content teams to ensure the platform is optimized for real-time news delivery.

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

বরিশালে কি কি বিখ্যাত?

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বরিশাল ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এর বিভিন্ন স্থান, ঐতিহ্যবাহী খাবার, নদী ও উৎসবগুলি বরিশালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। এখানে বরিশালের কিছু বিখ্যাত বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. নদ-নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বরিশাল “বাংলার ভেনিস” নামেও পরিচিত। এটি নদী-বিধৌত অঞ্চল, এবং এখানকার প্রধান নদীগুলি হল:

কীর্তনখোলা নদী: বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা এই নদীটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ নদীগুলো বরিশালের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করে। নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখা বা নৌকা ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ।

২. ঐতিহাসিক স্থানসমূহ

দুর্গাসাগর দীঘি: বরিশালের বাবুগঞ্জে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় দীঘি। মহারাজা শিবনারায়ণ ১৭৮০ সালে এ দীঘি খনন করেছিলেন, যা বরিশালের একটি ঐতিহাসিক ও পর্যটনকেন্দ্র।

গুঠিয়া মসজিদ (বায়তুল আমান জামে মসজিদ): এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি এর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নকশার জন্য বিখ্যাত।

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি: এই প্রাচীন জমিদার বাড়িটি বরিশালের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। এটি জমিদারদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপনের এক অনন্য উদাহরণ।

৩. ভাষা ও সাহিত্য

বরিশালকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ধরা হয়। অনেক খ্যাতিমান সাহিত্যিকের জন্মস্থান এটি, যেমন:

জীবনানন্দ দাশ: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ বরিশালের সন্তান। তার কবিতায় বরিশালের প্রকৃতি ও জীবনচিত্র গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

অন্নদাশঙ্কর রায়: একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক, কবি এবং লেখক। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মে বরিশালের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

৪. বরিশালের খাবার

বরিশালের খাদ্য সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ। এখানকার বেশ কিছু খাবার খুবই জনপ্রিয়:

ইলিশ মাছ: পদ্মা এবং মেঘনা নদীর ইলিশ মাছ বরিশালে অত্যন্ত বিখ্যাত। বরিশালবাসীরা ইলিশ মাছ দিয়ে বিভিন্ন পদ রান্না করে।

পিঠা-পুলি: বিশেষত শীতকালে বরিশালের পিঠাগুলো খুবই প্রসিদ্ধ। চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, ভাপা পিঠা এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের অংশ।

৫. ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও সংস্কৃতি

বরিশালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উৎসবগুলো এখানকার জীবনধারার একটি অংশ।

বর্ষবরণ উৎসব: পহেলা বৈশাখে বরিশালে বিশেষভাবে বর্ষবরণ উদযাপন করা হয়।

চড়ক পূজা: ঐতিহ্যবাহী এই হিন্দু উৎসবটি বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে পালন করা হয়।

৬. স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস

বরিশাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বরিশাল শহর এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। যুদ্ধকালীন বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ এখানে তৈরি হয়েছে, যেমন:

স্বাধীনতা জাদুঘর: বরিশালে মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল ও স্মৃতির সংরক্ষণ করা হয়েছে এই জাদুঘরে।

৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের শিক্ষার একটি বড় কেন্দ্র।

ব্রজমোহন কলেজ: এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম কলেজগুলোর মধ্যে একটি। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি বরিশালের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

৮. সাংস্কৃতিক কেন্দ্র

বরিশালের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নাটক, সংগীত, নৃত্য, এবং শিল্পকলা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও গ্রুপ এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবনে সক্রিয়।

বরিশালের এই বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য, প্রকৃতি, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি একসঙ্গে মিলে এ অঞ্চলকে অনন্য করে তুলেছে।