১২:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে আত্মগোপনে শেবাচিম চিকিৎসকরা, ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৩:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৮৩ বার পড়া হয়েছে

সরকার পতনের পরপরই কর্মস্থল ছেড়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকরা। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে নতুন করে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকট। ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। তবে অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসকদের কেউ কেউ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম।

সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিনই সারা দেশের মতো বরিশালেও ঘটে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ নানা বিশৃঙ্খলা, যা থেকে বাদ যায়নি দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘সরকার পতনের পরদিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট কর্মস্থল শেবাচিম হাসপাতালেই মারধরের শিকার হন সহকারী পরিচালক ডা. রায়হান। একই দিন মারধর করা হয় আওয়ামী লীগের কর্মী ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালামকে। পৃথক দুটি ঘটনার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকার পতনের পরদিন থেকেই স্বাচিপ অনুসারী চিকিৎসকরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। বিশেষ করে স্বাচিপের বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. সুদীপ কুমার হালদার, মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এএসএম সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈকত, স্বাচিপ নেত্রী ডা. তন্বী আক্তার এবং ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ও বঙ্গবন্ধু ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি-সম্পাদকসহ আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকরা আত্মগোপন করেন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ জিম্মি করে রেখেছিলেন স্বাচিপ অনুসারীরা। বিএনপি এবং জামায়াত অনুসারী ড্যাব ও এনডিএফের চিকিৎসকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি হাসপাতাল চত্বরে। আবার যারা কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের পদোন্নতি আটকে দেওয়াসহ নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখেন স্বাপিচ নেতারা। অথচ কর্মস্থলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের বেতন তুলে নেন স্বাচিপের একাধিক চিকিৎসক।

তারা আরও বলেন, সেই স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের মাধ্যমে। সরকার পতনের পরপরই বিএনপি এবং জামায়াতপন্থি চিকিৎসকরা হাসপাতালে প্রবেশ করেন। এমনকি এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে ডা. আজিজ রহিম, ডা. আমিনুল ইসলাম, ডা. মিজানুর রহমান এবং ডা. এমআর তালুকদার মুজিবসহ অন্য নেতাদের উপস্থিতিতে। তাদের উপস্থিতিতেই আতঙ্কে ফেলে দেয় আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করেন দৈনিক আরও অন্তত দুই হাজার রোগী। এ সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে যে সংখ্যক চিকিৎসকের প্রয়োজন তার প্রায় অর্ধেকটাই শূন্য।

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ হাসপাতালে সৃজনকৃতসহ মোট চিকিৎসকের পদ ৩০০। এর অনুকূলে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ১৪৮ জন। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক আওয়ামী সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মগোপন করেছেন। তাদের অনেকেই ব্যক্তিগত চেম্বারেও যেতে পারছেন না ভয়ে।

এমন তথ্য স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। তবে আত্মগোপনে থাকা চিকিৎসকদের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০-২৫ জন হবে বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। চিকিৎসকদের উপস্থিতিও বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এক দিনও কর্মস্থলে অনুপস্থিতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা আত্মগোপন করেছেন, তারা কেউ আমার অনুমতি নেননি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবাইকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দিয়েছি। এর পরও যারা কর্মস্থলে উপস্থিত হবেন না, তাদের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

ট্যাগস :

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Barisal Sangbad

বরিশাল সংবাদের বার্তা কক্ষে আপনাকে স্বাগতম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

বরিশালে আত্মগোপনে শেবাচিম চিকিৎসকরা, ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

আপডেট সময় : ০৩:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

সরকার পতনের পরপরই কর্মস্থল ছেড়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকরা। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে নতুন করে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকট। ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। তবে অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসকদের কেউ কেউ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম।

সূত্রমতে, গত ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওইদিনই সারা দেশের মতো বরিশালেও ঘটে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ নানা বিশৃঙ্খলা, যা থেকে বাদ যায়নি দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘সরকার পতনের পরদিন অর্থাৎ ৬ আগস্ট কর্মস্থল শেবাচিম হাসপাতালেই মারধরের শিকার হন সহকারী পরিচালক ডা. রায়হান। একই দিন মারধর করা হয় আওয়ামী লীগের কর্মী ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালামকে। পৃথক দুটি ঘটনার পরপরই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, সরকার পতনের পরদিন থেকেই স্বাচিপ অনুসারী চিকিৎসকরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। বিশেষ করে স্বাচিপের বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. সুদীপ কুমার হালদার, মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এএসএম সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সৈকত, স্বাচিপ নেত্রী ডা. তন্বী আক্তার এবং ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ও বঙ্গবন্ধু ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি-সম্পাদকসহ আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকরা আত্মগোপন করেন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ জিম্মি করে রেখেছিলেন স্বাচিপ অনুসারীরা। বিএনপি এবং জামায়াত অনুসারী ড্যাব ও এনডিএফের চিকিৎসকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি হাসপাতাল চত্বরে। আবার যারা কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের পদোন্নতি আটকে দেওয়াসহ নানাভাবে কোণঠাসা করে রাখেন স্বাপিচ নেতারা। অথচ কর্মস্থলে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করেও মাস শেষে মোটা অঙ্কের বেতন তুলে নেন স্বাচিপের একাধিক চিকিৎসক।

তারা আরও বলেন, সেই স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের মাধ্যমে। সরকার পতনের পরপরই বিএনপি এবং জামায়াতপন্থি চিকিৎসকরা হাসপাতালে প্রবেশ করেন। এমনকি এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে ডা. আজিজ রহিম, ডা. আমিনুল ইসলাম, ডা. মিজানুর রহমান এবং ডা. এমআর তালুকদার মুজিবসহ অন্য নেতাদের উপস্থিতিতে। তাদের উপস্থিতিতেই আতঙ্কে ফেলে দেয় আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণ করেন দৈনিক আরও অন্তত দুই হাজার রোগী। এ সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে যে সংখ্যক চিকিৎসকের প্রয়োজন তার প্রায় অর্ধেকটাই শূন্য।

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ হাসপাতালে সৃজনকৃতসহ মোট চিকিৎসকের পদ ৩০০। এর অনুকূলে দায়িত্বরত চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ১৪৮ জন। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক চিকিৎসক আওয়ামী সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মগোপন করেছেন। তাদের অনেকেই ব্যক্তিগত চেম্বারেও যেতে পারছেন না ভয়ে।

এমন তথ্য স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। তবে আত্মগোপনে থাকা চিকিৎসকদের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০-২৫ জন হবে বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। চিকিৎসকদের উপস্থিতিও বাড়ছে।

তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এক দিনও কর্মস্থলে অনুপস্থিতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা আত্মগোপন করেছেন, তারা কেউ আমার অনুমতি নেননি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবাইকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি দিয়েছি। এর পরও যারা কর্মস্থলে উপস্থিত হবেন না, তাদের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।