বরিশালে অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে অধ্যক্ষের দৌড়ঝাঁপ!

- আপডেট সময় : ০৭:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৩৫১ বার পড়া হয়েছে

অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্ত শুরু হওয়ায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বরিশাল বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রনব কুমার বেপারী। অধ্যক্ষের পদ ফিরে পেতে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ন্যা দিচ্ছেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন অধ্যক্ষ প্রনব বেপারী। অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থলোপাট, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ নানা অপকর্ম করলেও এতদিন তার ভয়ে মুখ খুলতে পারেনি কেউ। তবে ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্য প্রতিষ্ঠানে না আসায় ২০ আগস্ট থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা নতুন করে অধ্যরে পদত্যাগের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের শুরু করে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শাকিলা রহমানের হস্তক্ষেপে প্রণব কুমার বেপারীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানে আসলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা লিখিতভাবে তাদের অভিযোগ পেশ করেন। এরপর একের পর এক উঠে আসতে শুরু করে অধ্যক্ষ প্রণব কুমার ব্যাপারীর দুর্নীতি ও অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য চিত্র।
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অন্যতম অভিযোগ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন এই শিক্ষক। তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেত না কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মারধর-ভয়ভীতি দেখানোর বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রায় অর্ধকোটি টাকা বেশি আত্মসাৎ, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়েছে।
অধ্যক্ষ হওয়ার যোগ্যতা না থাকার পরেও আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ক্ষমতা ও প্রভাব দেখিয়ে অধ্য বনে যান এই প্রনব কুমার বেপারী। এমনটাই অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক। তবে এত কিছুর পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় কলেজটিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাই স্কুল এন্ড কলেজের দপ্তরি রফিকের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় ওই দপ্তরি বলেন, অধ্যক্ষ প্রনব কুমার বেপারী তাকে নামাজে বাঁধা দেয় এবং জানাযার নামাজ পরতে যেতে দেয় না।
একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক মহিলা দপ্তরির শোভা রানীর উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে প্রনব কুমারের বিরুদ্ধে। নির্যাতনে প্রতিবাদ করায় শোভা রাণীকে স্কুল থেকে বের করে দেন বলেও জানান তিনি ।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল রউফ বলেন, বহিস্কৃত অধ্যক্ষ প্রনব কুমারের সকল বেতন ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশের বিলম্বের বিষয় তিনি জানান, আগামী দুই থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে মাধপাশা এলাকার কয়েক বাসিন্দা জানান, প্রনব কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন শেষে নেই। সঠিক তদন্ত হলে তিনি চাকুরী হারাবেন। তবে তিনি কোন ভাবে যদি এ প্রতিষ্টানে আসতে পরে তাহলে কয়েশত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে প্রনব কুমার বেপারী তার পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করানোর জন্য বিভিন্ন প্রত্রিকায়, রাজনিতি মহলে দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানন, তদন্ত প্রতিবেদন তার পক্ষে নেয়ার জন্য ব্যাপক তদবির চালাচ্ছেন সাথে বরিশাল শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন মহলে লবিং তদবির ও চালাচ্ছেন তিনি।
তবে এসকল বিষয় অস্বীকার করে প্রনব কুমার বেপারী জানান, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এসকল বিষয় সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এসময় প্রতিবেদকের কাছে তথ্যপ্রমান ও ভিডিও রয়েছে বলে জানালে তিনি কিছু বলতে চাই না বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন।