০৫:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালের নদ-নদীতে অবাধে শিকার হচ্ছে ইলিশের পোনা

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৮:২৭:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরিশালের নদ-নদীতে অবাধে শিকার হচ্ছে ইলিশের পোনা। প্রকাশ্যে অসাধু জেলেরা ইলিশ পোনা শিকার করেলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। ওইসব জেলেদের শিকার করা জাটকা ইলিশ প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সকল নদ-নদীতে জাটকা (১০ ইঞ্চির কম আকৃতির ইলিশ) রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। পাশাপাশি দেশের পাঁচটি ইলিশ অভয়াশ্রমে চলছে নিষেধাজ্ঞা। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ৩০ জুন।

সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে (কার্ডধারী) ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৯টি জেলে পরিবার সরকারি বরাদ্দের চাল পাবেন। এসময় প্রত্যেক জেলে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল পাবেন। তবে বরিশালের অধিকাংশ এলাকার জেলেরা এখনও সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশালে কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৪৩ হাজার ২৮৯ জন, পিরোজপুরে ১৭ হাজার ৬৮২জন, পটুয়াখালীতে ৫০ হাজার ১৩৯ জন, ভোলায় ৮৯ হাজার ছয়শ’ জেলে, বরগুনায় ২৬ হাজার ৪৮৯ জন জেলে ও ঝালকাঠি জেলায় তিন হাজার দুইশ’ জন জেলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৯ জন জেলের জন্য দুই মাসের চাল বরাদ্ধ এসেছে। যা পর্যায়ক্রমে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

জেলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দাবি, মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিবছর রেকর্ড জাটকা উৎপাদন দেখিয়ে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। কিন্ত ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না। সংকটের কারনে কয়েক বছর যাবত ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। সূত্রের দাবি, মৎস্য অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু মাঠ কর্মকর্তাদের জন্য জাটকার সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইলিশ নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জাটকা আহরন বন্ধ করতে পারলে এখনকার জাটকা আগামী মৌসুম জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাত থেকে নয়শ’ গ্রাম ওজনের পরিপূর্ন ইলিশ সম্পদে পরিনত হতে পারতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাটকার উৎপাদনস্থল মেঘনা ও তার শাখা নদীগুলোতে আহরনের মহোৎসব চলছে। নদী তীরে প্রতিদিন শত শত মন পাইকারী জাটকা ইলিশ বিক্রি হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত হচ্ছে। বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা, কালাবদর, লতা, ভোলা ও বরিশাল সদর উপজেলার অংশের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া, কীর্তনখোলা, বানরীপাড়া ও উজিরপুরের সন্ধ্যা, মুলাদীর আড়িয়াল খাঁসহ এখানকার সবকটি নদীতে এখন অবাধে চলছে ইলিশের পোনা নিধনের মহোৎসব। আর এসব মাছ বরিশাল নগরীসহ সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে। তিন থেকে চার ইঞ্চি আকৃতির ইলিশের পোনা চাপিলা নামে বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। জেলেদের দাবি, দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের চাপের মুখে তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশের পোনা নিধনে বাধ্য হচ্ছেন।

বরিশাল মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এ অঞ্চলের নদ-নদীতে চাপিলা খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায়, যা ধরা পরছে তার মধ্যে ইলিশের পোনাই বেশি। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সাগরের নোনা পানি ছেড়ে মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে। যে কারনে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলা এবং ভোলা জেলা সংলগ্ন মেঘনা-তেঁতুলিয়া হলো জাটকার খনি।
মৎস্যজীবী সমিতির হিজলা উপজেলার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, শত শত জেলে মেঘনায় জাল ফেলে প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত জাটকা আহরন করছে। অথচ এসব জাটকা এখন আহরন করা না হলে আগামী মৌসুম জুলাই ও সেপ্টেম্বরে প্রতিটি জাটকা সাত থেকে নয়শ’ গ্রাম ওজনের পরিপূর্ন ইলিশে পরিনত হতো। মেঘনা তীরের হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মনির মাতুব্বর বলেন, গত কয়েকবছর ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যায়না। এখন জাল ফেললেই বোঝাই করে জাটকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই শত শত নৌকায় উৎসবমুখর পরিবেশে জাটকা ধরা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধনের ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আমাদের স্বল্প জনবল দিয়ে বিশাল নদী পাহড়া দেওয়া মুশকিল হয়ে পরেছে। মেঘনায় ও তার শাখা নদীতে জাটকা নিধনের বিষয়টি শুনেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযানে কিছু জাল জব্দও করা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদী পর্যবেক্ষন করছেন। তাছাড়া গত ১১ জানুয়ারি থেকে এই অঞ্চলে কম্বিং অপারেশন চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Barisal Sangbad

বরিশাল সংবাদের বার্তা কক্ষে আপনাকে স্বাগতম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

বরিশালের নদ-নদীতে অবাধে শিকার হচ্ছে ইলিশের পোনা

আপডেট সময় : ০৮:২৭:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বরিশালের নদ-নদীতে অবাধে শিকার হচ্ছে ইলিশের পোনা। প্রকাশ্যে অসাধু জেলেরা ইলিশ পোনা শিকার করেলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। ওইসব জেলেদের শিকার করা জাটকা ইলিশ প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সকল নদ-নদীতে জাটকা (১০ ইঞ্চির কম আকৃতির ইলিশ) রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। পাশাপাশি দেশের পাঁচটি ইলিশ অভয়াশ্রমে চলছে নিষেধাজ্ঞা। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ৩০ জুন।

সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে (কার্ডধারী) ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৯টি জেলে পরিবার সরকারি বরাদ্দের চাল পাবেন। এসময় প্রত্যেক জেলে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল পাবেন। তবে বরিশালের অধিকাংশ এলাকার জেলেরা এখনও সরকারি বরাদ্দের চাল পায়নি। সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশালে কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৪৩ হাজার ২৮৯ জন, পিরোজপুরে ১৭ হাজার ৬৮২জন, পটুয়াখালীতে ৫০ হাজার ১৩৯ জন, ভোলায় ৮৯ হাজার ছয়শ’ জেলে, বরগুনায় ২৬ হাজার ৪৮৯ জন জেলে ও ঝালকাঠি জেলায় তিন হাজার দুইশ’ জন জেলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ২ লাখ ৩০ হাজার ৩৮৯ জন জেলের জন্য দুই মাসের চাল বরাদ্ধ এসেছে। যা পর্যায়ক্রমে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

জেলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দের দাবি, মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিবছর রেকর্ড জাটকা উৎপাদন দেখিয়ে ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। কিন্ত ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় না। সংকটের কারনে কয়েক বছর যাবত ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। সূত্রের দাবি, মৎস্য অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু মাঠ কর্মকর্তাদের জন্য জাটকার সুরক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইলিশ নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জাটকা আহরন বন্ধ করতে পারলে এখনকার জাটকা আগামী মৌসুম জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাত থেকে নয়শ’ গ্রাম ওজনের পরিপূর্ন ইলিশ সম্পদে পরিনত হতে পারতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাটকার উৎপাদনস্থল মেঘনা ও তার শাখা নদীগুলোতে আহরনের মহোৎসব চলছে। নদী তীরে প্রতিদিন শত শত মন পাইকারী জাটকা ইলিশ বিক্রি হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত হচ্ছে। বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা, কালাবদর, লতা, ভোলা ও বরিশাল সদর উপজেলার অংশের মেঘনা ও তেঁতুলিয়া, কীর্তনখোলা, বানরীপাড়া ও উজিরপুরের সন্ধ্যা, মুলাদীর আড়িয়াল খাঁসহ এখানকার সবকটি নদীতে এখন অবাধে চলছে ইলিশের পোনা নিধনের মহোৎসব। আর এসব মাছ বরিশাল নগরীসহ সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে। তিন থেকে চার ইঞ্চি আকৃতির ইলিশের পোনা চাপিলা নামে বিক্রি করা হচ্ছে প্রকাশ্যে। জেলেদের দাবি, দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের চাপের মুখে তারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশের পোনা নিধনে বাধ্য হচ্ছেন।

বরিশাল মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এ অঞ্চলের নদ-নদীতে চাপিলা খুব কম পরিমাণে পাওয়া যায়, যা ধরা পরছে তার মধ্যে ইলিশের পোনাই বেশি। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সাগরের নোনা পানি ছেড়ে মিঠাপানিতে এসে ডিম ছাড়ে। যে কারনে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলা এবং ভোলা জেলা সংলগ্ন মেঘনা-তেঁতুলিয়া হলো জাটকার খনি।
মৎস্যজীবী সমিতির হিজলা উপজেলার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, শত শত জেলে মেঘনায় জাল ফেলে প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত জাটকা আহরন করছে। অথচ এসব জাটকা এখন আহরন করা না হলে আগামী মৌসুম জুলাই ও সেপ্টেম্বরে প্রতিটি জাটকা সাত থেকে নয়শ’ গ্রাম ওজনের পরিপূর্ন ইলিশে পরিনত হতো। মেঘনা তীরের হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়ন মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মনির মাতুব্বর বলেন, গত কয়েকবছর ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যায়না। এখন জাল ফেললেই বোঝাই করে জাটকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই শত শত নৌকায় উৎসবমুখর পরিবেশে জাটকা ধরা হচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধনের ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, আমাদের স্বল্প জনবল দিয়ে বিশাল নদী পাহড়া দেওয়া মুশকিল হয়ে পরেছে। মেঘনায় ও তার শাখা নদীতে জাটকা নিধনের বিষয়টি শুনেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি অভিযানে কিছু জাল জব্দও করা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিভিন্ন সময়ে হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদী পর্যবেক্ষন করছেন। তাছাড়া গত ১১ জানুয়ারি থেকে এই অঞ্চলে কম্বিং অপারেশন চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।