প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই সাদিক অনুসারী রিয়াদের পেশা!

- আপডেট সময় : ১০:০৬:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
- / ১৯৮ বার পড়া হয়েছে

ভোলার বোরহানউদ্দিনের কাচিয়া ও টবগী ইউনিয়নে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ মানুষকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায় এবং নানারকম অপরাধমূলক ঘটনা একের পর এক ঘটছেই। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই এসব প্রতারনা করছেন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের এসব প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
টবগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ডাক্তার বাড়ির জাকির হোসেন পেশায় একজন মাহিন্দ্রা চালক। তার পুত্র রিয়াদ হোসেন (২৩) মানুষের সাথে প্রতারনা করে বনে গেছেন লাখোপতি। অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে টবগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে রিয়াদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে মাদক ও প্রতারনার একটি বিশাল প্রতারক চক্র। এই চক্রের সদস্যরা মাদক বিক্রি ও সেবন করেন। এই চক্রের সদস্যরা সহজ-সরল ও প্রবাসীদের টার্গেট করে তাদের দূর্বলতার খোঁজ খবর নিয়ে তাদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন তাদেরকে জ্বিন বাবা ও জ্বিন মা সেজে মোবাইলে ফোন করে কন্ঠস্বর পরিবর্তন করে কথা বলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের পারিবারিক অশান্তির দূর্বল যায়গায় প্রথমে আঘাত করার মাধ্যমে এই চক্রের প্রতারনা শুরু হয় বলে জানা গেছে। জানাযায়, হাসিনা সরকারের আমলে বরিশালের সাবেক মেয়ার সাদিক আব্দুল্লাহ সহ একাধিক আওয়ামীলীগ নেতাদের নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন এই রিয়াদ।
মুঠোফোনে কল করে নিজেকে ‘জিনের বাদশাহ’ বলে পরিচয় দেন এই চক্রের মুল হোতা রিয়াদ ও পরে ফোন করা ব্যক্তিকে ‘গুপ্তধন’ দেওয়ার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাঁর স্বামী-সন্তান বা স্ত্রী, বাবা-মা মারা যাবেন এমন ভয়-ভীতি দেখিয়ে দিনের পর দিন টাকা হাতিয়ে নেয়। ফোন করা ব্যক্তিকে রিয়াদ জানায় জ্বিনদের কাছে গুপ্তধন রয়েছে, এগুলো জিনের মাধ্যমে উদ্ধার করতে হবে। গুপ্তধনে ১৮টি স্বর্ণমুদ্রা রয়েছে যার অনুমানিক মূল্য ৩৬ লাখ টাকা। এগুলো পেতে হলে আপনাকে আমার কথা মতো চলতে হবে চললে আপনি এই গুপ্তধনের মালিক হবেন। এজন্য এতিমখানায় পড়ুয়া ৫০০ হাফেজদের খাবারের জন্য ৫টি গরু বাবদ ৫লাখ টাকা বা তার সমমুল্যের কিছু দিতে হবে। এই মানত পূরন করলে জিনেরা আপনাকে গুপ্তধনের মালিক করে দেবে। এমনি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করে ফেলেন বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
প্রতারক চক্রটির মহিলা সদস্য মূলহোতা রিয়াদের মা এই চক্রের অন্যতম সদস্য বলে জানা গেছে রিয়াদের মা মোবাইল নম্বরে ফোন করে নিজেকে দরবেশ মা পরিচয় দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তি কে সালাম দেয় এবং বলে যে, ‘বাবা তোর ভাগ্যে বহু ধনরত্ন দেখা যাইতেছে। তুই বড় ভাগ্যবান। তুই ছোটবেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করিতেছিস। তোর প্রাপ্য ধন-সম্পদ সাত রাজার ধন আল্লাহর নির্দেশে ৭শ জন জিন পাহারা দিতেছে। এই ধন-সম্পদ তুই যদি পাইতে চাস, তাহলে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ, টুপি দান করতে হবে।’ এইভাবে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে টার্গেট করা ব্যক্তির সাথে মোবাইলে কথা বলতে থাকে এবং তাকে মূল্যবান ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ-লালসা দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে লোভ লালসার ফাঁদে ফেলে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয় তারা।
এবিষয়ে সমাজকর্মী আব্দুল মাজেদ বলেন, বর্তমান সমাজে দিনদিন মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বেড়ে চলছে। রাষ্ট্রের উচিৎ অপরাধ প্রবনতা কমাতে জনগনের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোগ নেয়া। তাহলে মানুষ এ ধরনের প্রতারনা থেকে রক্ষা পাবে।
এবিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত রিয়াদ হোসেনের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।