০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসক ও ওষুধ সঙ্কটে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল

বরিশাল সংবাদ বার্তা কক্ষ
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৬:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৭২ বার পড়া হয়েছে

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। পাশাপাশি প্রিন্টার নষ্ট থাকায় এক্স-রে মেশিন বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি সমস্যায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। গুরুত্বপূর্ণ এ সেবাগুলো বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাটালটিতে রয়েছে ওষুধ সঙ্কটও।

এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতালটি উদ্বোধন হলেও সেবা কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। তবে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন শিগগিরই এসব সমস্যা সমধান করা হবে।

জানা যায়, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। এরমধ্যে আছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে অন্য হাসপাতালের পাঁচজন চিকিৎসক এখানে সংযুক্ত হয়ে কাজ করছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে প্রয়োজনীয় পুরুষ নাস কম থাকায় জরুরি সেবায় বিঘ্ন ঘটে। রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরও সঙ্কট।

১০০ শয্যার ঝালকাঠির সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। এরমধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ মানষ। এই হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় অহরহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া চক্ষু বিশেষজ্ঞের পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য থাকায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এসব রোগীদের পার্শবর্তী বরিশালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে ওষুধ সঙ্কটও।
সব ধরণের ওষুধ নেই দীর্ঘদিন ধরে। জেলা সদরের এই হাসপাতালের প্যাথলজিতে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। এর ফলে এখানে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাহিরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয় রোগীদের। এতে করে সরকারি ধার্যকৃত টাকার চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা গুনতে হয় তাদের। গত ছয় মাস ধরে হাসপাতালটির এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত সেটিকে সচল করার কোনো পদক্ষেপ নেননি তারা। ঝালকাঠি সদর হাসপালে কে এমসি কর্নার নেই। এনআইসিউ না থাকায় নবজাতক শিশুদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বজনদের। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়কের চাপিয়ে দেয়া নিয়মের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালনি ক্রয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে গত ছয় মাস ধরে রোগীরা নিজ ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের খরচ বহন করছেন।

এদিকে ২৫০ শয্যার জন্য ৯ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ হলেও জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় এখনি চালু হচ্ছে না ২৫০ শয্যার কার্যক্রম। দ্রুত সমস্যার সমাধান করে রোগীদের এক্স-রেসহ সকল সেবা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা চাঁদকাঠি এলাকার শিউলী আক্তার বলেন, আমার ছেলের ঘাড়ে সমস্যা। এখানে এসেছিলাম চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক পেলাম না। এখানের চিকিৎসকরা বরিশালে গিয়ে এই সমস্যার যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের কাছে যেতে বলেছেন।

নলছিটি উপজেলার মগড় গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ছেলের হাঁটুতে ব্যাথা, তাই সদর হাসপাতালে এলে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেন। হাসপাতালের এক্সে-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল, তাই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেশি টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে। এই হাসপাতালে সব ধরণের প্যাথলজিও নেই। শুধু ডা. আবুয়াল হাসান ও ডা. ইমাম হোসেন জুয়েল ছাড়া ভালো কোনো চিকিসক নেই। এই দু’জনের কক্ষে ভিড় লেগে আছে। যত রোগী, তারাই সামলাচ্ছেন।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, চিকিসক ও নার্স সঙ্কট অনেক আগে থেকেই। ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি উদ্বোধন হওয়াতে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু নতুন হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আমরা এক্স-রে মেশিনের প্রিন্টার সারানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। শিগগিরই এসব সমস্যা সামাধান হয়ে যাবে।

ট্যাগস :

Add

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

Barisal Sangbad

বরিশাল সংবাদের বার্তা কক্ষে আপনাকে স্বাগতম।

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

চিকিৎসক ও ওষুধ সঙ্কটে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল

আপডেট সময় : ০৬:৪৬:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্স সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। পাশাপাশি প্রিন্টার নষ্ট থাকায় এক্স-রে মেশিন বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি সমস্যায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। গুরুত্বপূর্ণ এ সেবাগুলো বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাটালটিতে রয়েছে ওষুধ সঙ্কটও।

এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন হাসপাতালটি উদ্বোধন হলেও সেবা কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। তবে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ বলছেন শিগগিরই এসব সমস্যা সমধান করা হবে।

জানা যায়, ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। এরমধ্যে আছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে অন্য হাসপাতালের পাঁচজন চিকিৎসক এখানে সংযুক্ত হয়ে কাজ করছেন। সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে প্রয়োজনীয় পুরুষ নাস কম থাকায় জরুরি সেবায় বিঘ্ন ঘটে। রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিরও সঙ্কট।

১০০ শয্যার ঝালকাঠির সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। এরমধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন সাধারণ মানষ। এই হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় অহরহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া চক্ষু বিশেষজ্ঞের পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য থাকায় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এসব রোগীদের পার্শবর্তী বরিশালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালটিতে রয়েছে ওষুধ সঙ্কটও।
সব ধরণের ওষুধ নেই দীর্ঘদিন ধরে। জেলা সদরের এই হাসপাতালের প্যাথলজিতে আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। এর ফলে এখানে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাহিরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয় রোগীদের। এতে করে সরকারি ধার্যকৃত টাকার চেয়ে কয়েকগুন বেশি টাকা গুনতে হয় তাদের। গত ছয় মাস ধরে হাসপাতালটির এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত সেটিকে সচল করার কোনো পদক্ষেপ নেননি তারা। ঝালকাঠি সদর হাসপালে কে এমসি কর্নার নেই। এনআইসিউ না থাকায় নবজাতক শিশুদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্বজনদের। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়কের চাপিয়ে দেয়া নিয়মের কারণে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালনি ক্রয় বন্ধ রয়েছে। এর ফলে গত ছয় মাস ধরে রোগীরা নিজ ব্যবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের খরচ বহন করছেন।

এদিকে ২৫০ শয্যার জন্য ৯ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ হলেও জনবল কাঠামো অনুমোদন না হওয়ায় এখনি চালু হচ্ছে না ২৫০ শয্যার কার্যক্রম। দ্রুত সমস্যার সমাধান করে রোগীদের এক্স-রেসহ সকল সেবা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা চাঁদকাঠি এলাকার শিউলী আক্তার বলেন, আমার ছেলের ঘাড়ে সমস্যা। এখানে এসেছিলাম চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক পেলাম না। এখানের চিকিৎসকরা বরিশালে গিয়ে এই সমস্যার যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন, তাদের কাছে যেতে বলেছেন।

নলছিটি উপজেলার মগড় গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, আমার ছেলের হাঁটুতে ব্যাথা, তাই সদর হাসপাতালে এলে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেন। হাসপাতালের এক্সে-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল, তাই বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেশি টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে। এই হাসপাতালে সব ধরণের প্যাথলজিও নেই। শুধু ডা. আবুয়াল হাসান ও ডা. ইমাম হোসেন জুয়েল ছাড়া ভালো কোনো চিকিসক নেই। এই দু’জনের কক্ষে ভিড় লেগে আছে। যত রোগী, তারাই সামলাচ্ছেন।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, চিকিসক ও নার্স সঙ্কট অনেক আগে থেকেই। ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি উদ্বোধন হওয়াতে রোগীর চাপ বেড়েছে। কিন্তু নতুন হাসপাতালের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। আমরা এক্স-রে মেশিনের প্রিন্টার সারানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। শিগগিরই এসব সমস্যা সামাধান হয়ে যাবে।