আগামীকাল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা

- আপডেট সময় : ১০:৩১:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১১৩ বার পড়া হয়েছে

পলাশ চন্দ্র দাসঃ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার আরাধনা করা হয় এই বিশ্বকর্মা দেবকূলের এই গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। বিশ্বকর্মার চারটি হাত, এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, অন্যহাতে থাকে হাতুড়ি।বিশ্বকর্মা মানেই ঘুড়ির মেলা,ভোকাট্টা আর হার-জিতের পালা। সঙ্গে সমান তালে চলে রান্না পূজোও। পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছরের মতো এ বছরও ১৭ সেপ্টেম্বরে পালিত হবে বিশ্বকর্মা পূজা। হিন্দু পুরাণ, বেদ, রামায়ণ ও মহাভারতে বিশ্বকর্মার মাহাত্ম্য ও বর্ণনা রয়েছে। হিন্দুধর্মে, বিশ্বকর্মাকে সমস্ত নির্মাণ শিল্পের দেবতা হিসেবে বলা হয়।
হিন্দু ধর্ম মতে, বৃহস্পতির ভগিনী যোগ সিদ্ধা হলেন বিশ্বকর্মার মাতা ও অষ্টম বসু প্রভাস হলেন তাঁর পিতা। কথিত আছে, বিশ্বকর্মা হলেন স্বর্গলোকের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থপতি ও ভাস্কর। কারিগরি ও নির্মাণ শিল্পের পুরোধা বলা যেতে পারে। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার আরাধনা করা হয়। এই বিশ্বকর্মা আসলে কে পুরাণ মতে আবার বলা হয়, ব্রহ্মার নাভিমূল থেকে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বকর্মা। দেবকূলের এই গুরুত্বপূর্ণ দেবতার চারটি হাত, এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, অন্যহাতে থাকে হাতুড়ি। ধর্ম মতে, দাড়িপাল্লা হল জ্ঞান ও কর্মের প্রতীক, অন্যদিকে, হাতুড়ি হল শিল্পনির্মাণের প্রতীক। এছাড়া বিশ্বকর্মার বাহন হল হাতি। রামায়ণে একাধিক জায়গায় বিশ্বকর্মার কীর্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। আদিকাণ্ডে বলা হয়েছে, বিশ্বকর্মা দুটি ধনুক বানিয়েছিলেন, তার মধ্যে একটি দিয়েছিলেন শিবকে।
শিবের পরম ভক্ত ছিলেন শ্রীরাম। সীতাকে বিবাহ করার সময় শিবের ধনুক ভেঙে ফেলেছিলেন রামচন্দ্র। এছাড়া ঋষি অগস্ত্যের ভবন, কুবেরের অলকাপুরী, রাবণের লঙ্কাপুরী, ব্রহ্মার সুসজ্জিত পুষ্পক রথ নির্মাণ করেছিলেন তিনি। এছাড়া বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের অস্ত্র নির্মাণ করেছিলেন। কথিত আছে, পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথমূর্তিও তিনিই নির্মাণ করেছিলেন। তাই তাঁকে, স্বর্গীয় সূত্রধরও বলা হয়। প্রতিবছর ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন ধুমধাম করে বিশ্বকর্মার আরাধনা করা হয়। বিশেষ করে সুতোর, মিস্ত্রিরা বিশ্বকর্মা পুজোর প্রচলন রয়েছে।
পঞ্জিকা মতে, সাধারণত প্রতি বছর ১৭ সেপ্টম্বর বিশ্বকর্মার পুজো করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর একই দিন এই বিশেষ পুজো করা হয়। এখনও পর্যন্ত তারিখের কোনও হেরফের হয়নি।
বদলও করা হয় না। তবে এবছর বিশ্বকর্মা পুজো হবে আগামীকাল ১৭ সেপ্টেম্বর। কারণ, সনাতন ধর্ম অনুসারে, হিন্দুদের দেব-দেবী পুজো করার কোনও বাঁধাধরা তারিখ নেই।তবে সব দেবদেবী আরাধনার তিথি স্থির করা হয় চন্দ্রের গতিপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে। তবে প্রথা অনুসারে, বিশ্বকর্মার পুজোর তারিখ কখনও পরিবর্তন করা হয়। প্রতি বছর একই তারিখে পালন করা হয়। হিন্দু দেবদেবীদের পুজোর তিথি চন্দ্র মতে করা হলেও, বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি স্থির করা হয় সূর্যের গতিপ্রকৃতির উপর। ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে এবছরেই দেখা যাবে। বিশ্বকর্মা পুজো সাধারণত ভাদ্র মাসের শেষ দিন পুজো করা হয়। এদিন আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি ওড়ানোর চলে।
বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র,শিবের ত্রিশূল, ইন্দ্রের বজ্র -এই সবই বিশ্বকর্মার অমর নির্মাণ এছাড়া কুবেরের অস্ত্র, কার্তিকের শক্তি – সবই বিশ্বকর্মা সৃষ্টি। এই গোটা বিশ্বভূবন তিনিই নির্মাণ করেন বলে মনে করা হয় বিশ্বকর্মা যে শুধু কর্মে সুদক্ষ তা নয়, তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেছেন। বাস্তুশাস্ত্রম নামক একটি স্থাপত্যশিল্প বিষয়ক গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। পুরাণ অনুসারে চারটি বেদের মতো চারটি উপবেদও রয়েছে এই চার উপবেদ হল আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং স্থাপত্যবেদ। এই স্থাপত্যবেদ নামক উপবেদের রচয়িতা হলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। মনে করা হয়, তিনিই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রধান বাস্তুকার দ্বাপর যুগে তিনি সৃষ্টি করেন দ্বারকা, হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ।