বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) দেশের সরকারি টেলিকম খাতে বড় পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এবার চালু করতে যাচ্ছে MVNO SIM কার্ড এবং অ্যাপ-ভিত্তিক আইপি কলিং সেবা। বিটিসিএলের আলাপ (Alap) অ্যাপ-এর সঙ্গে মিলিয়ে এই সিম কার্ড বাজারে আসবে।
বিষয়টি সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমাদ তায়্যেব। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে গ্রাহকরা প্রথমবারের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে মোবাইল সেবা, আনলিমিটেড ভয়েস কল এবং সীমাহীন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
—
MVNO বা Mobile Virtual Network Operator হচ্ছে এমন একটি টেলিকম মডেল যেখানে কোম্পানিটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক অবকাঠামো বা স্পেকট্রাম মালিক না হয়েও অন্য প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্ক ভাড়া নিয়ে সেবা প্রদান করে। অর্থাৎ, বিটিসিএল নিজস্ব মোবাইল টাওয়ার না বানিয়েই বিদ্যমান টেলিকম অপারেটরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সিম কার্ড ইস্যু করবে।
এই মডেলটি ইতিমধ্যেই ইউরোপ, আমেরিকা এবং ভারতসহ বহু দেশে জনপ্রিয়। গ্রাহকরা সাশ্রয়ী দামে মোবাইল সেবা পেয়ে থাকেন এবং প্রতিযোগিতা বাড়ার কারণে সার্বিক টেলিকম খাত উপকৃত হয়।
—
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সব মোবাইল সেবা বেসরকারি কোম্পানির হাতেই ছিল। তবে National Telecommunication Network and Licensing Policy 2025-এর সংস্কারের ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও MVNO সেবা চালুর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিটিসিএল হবে বাংলাদেশের প্রথম সরকারি অপারেটর, যারা এই মডেলে বাজারে প্রবেশ করছে।
এটি সরকারি টেলিকম খাতে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কারণ, বিটিসিএল দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী ফোন ও ব্রডব্যান্ড সেবায় সীমাবদ্ধ ছিল। এবার তারা সরাসরি সাধারণ গ্রাহকদের হাতে মোবাইল সেবা পৌঁছে দিতে পারবে।
—
বিটিসিএলের নিজস্ব আলাপ (Alap) অ্যাপ ইতিমধ্যেই বাজারে রয়েছে, যেখানে গ্রাহকরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কল করতে পারেন। নতুন MVNO SIM চালু হওয়ার পর এই অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গ্রাহকরা পাবেন:
এটি সরাসরি বিদেশি সেবা যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো কিংবা ভাইবারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে।
—
শুধু সিম কার্ড নয়, বিটিসিএল তাদের BTCL Gpon এবং BTCL ISP ব্র্যান্ডের মাধ্যমে সীমাহীন ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। গ্রাহকরা বাড়ি বা অফিসে উচ্চ গতির ফাইবার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়া বিনোদনের জন্য স্থানীয় জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম Bongo, Chorki ও Hoichoi যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সেবা যেমন Netflix ও Amazon Prime যুক্ত করার কথাও ভাবছে বিটিসিএল।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার চাইছে যেন মানুষ পাইরেসির দিকে না যায়, বরং কম খরচে বৈধ কনটেন্ট দেখতে পারে।
—
বাংলাদেশের বড় একটি সমস্যা হচ্ছে স্মার্টফোনের উচ্চমূল্য। অনেক গ্রাহক স্মার্টফোন কিনতে পারেন না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে বিটিসিএল ঘোষণা দিয়েছে, তারা মাসিক ৫০০ টাকা কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রি করবে।
প্রথমে একটি ডিপোজিট দিতে হবে, এরপর ১২ মাসের কিস্তিতে স্মার্টফোন পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
—
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে Triple Play এবং Quad Play প্যাকেজ বেশ জনপ্রিয়। অর্থাৎ একই প্যাকেজে ভয়েস, ডাটা, ডিভাইস এবং বিনোদন পাওয়া যায়। বিটিসিএলও একই মডেল চালু করার পরিকল্পনা করছে।
ফলে একসঙ্গে সিম কার্ড, আনলিমিটেড ভয়েস কল, হাই-স্পিড ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও স্ট্রিমিং সেবা পাওয়া যাবে।
—
MVNO সেবা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। সেখানে নতুন কোম্পানিগুলো কম দামে মোবাইল সেবা দিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশে বিটিসিএল যদি সঠিকভাবে সেবা দিতে পারে, তবে গ্রাহকরা সাশ্রয়ী দামে কল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং বাজারে নতুন ভারসাম্য তৈরি হবে।
—
বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক মোবাইল সেবা দিচ্ছে। বিটিসিএল MVNO সেবা চালু করলে বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
গ্রাহকদের জন্য সুবিধা হবে:
এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা বাড়বে এবং দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে এটি একটি বড় মাইলফলক হবে।
—
বিটিসিএল (BTCL) এর MVNO SIM ও আলাপ অ্যাপ চালুর ঘোষণা বাংলাদেশের টেলিকম খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আনলিমিটেড ভয়েস প্যাকেজ, সীমাহীন ইন্টারনেট, কিস্তিতে স্মার্টফোন এবং বৈধ স্ট্রিমিং সেবা একসঙ্গে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে গেলে এটি সত্যিকার অর্থেই একটি বিপ্লব হবে।
আগামী অক্টোবর মাসে বিস্তারিত ঘোষণা আসবে। তবে ইতিমধ্যেই গ্রাহক মহলে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
—