দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন বরাবরই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে বিগত একতরফা নির্বাচনে বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ায় দীর্ঘদিন এ আসনে কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল অনুপস্থিত। এবার নিষিদ্ধ দলের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ায় নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে এই আসনে বিএনপির অন্তত চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী সরবভাবে মাঠে কাজ করছেন। একইসাথে জামায়াতে ইসলামি ছয় মাস আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী বাছাইয়ের আলোচনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে বরিশাল-১ আসনে আগামী নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে বহুস্তরীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার।
বিএনপির চার সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন:
১. ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান – ক্লিন ইমেজ ও তৃণমূলে সুসংগঠিত নেতৃত্বের জন্য পরিচিত।
২. জহির উদ্দিন স্বপন – সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
৩. আকন কুদ্দুসুর রহমান – কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।
৪. অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল – সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য।
তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক ইউনিটসহ বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণির মানুষের আনুষ্ঠানিক সমর্থন পেয়েছেন। তার জনপ্রিয়তার বড় ভিত্তি হচ্ছে আগৈলঝাড়া উপজেলায় স্থায়ী অবস্থান এবং বিগত ওয়ান ইলেভেন সময় থেকে দলের দুর্দিনেও মাঠে সক্রিয় অংশগ্রহণ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে মাত্র সাত দিনের প্রচারণা চালিয়েও তিনি ৭০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী পেয়েছিল ৯৮ হাজারের কিছু বেশি। বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সে নির্বাচন জেতা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এ আসনে হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি নিয়মিত মাঠে কাজ করছেন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে প্রাথমিক সভা করে ফেলেছে।
নির্বাচনী হিসাব বলছে, এই আসনে মূল লড়াই হবে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী বনাম জামায়াত ও ইসলামী দলের প্রার্থীদের মধ্যে। এছাড়া এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলগুলোর এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান তৎপরতা চোখে পড়ছে না।
আসনটির বড় বৈশিষ্ট্য হলো আগৈলঝাড়া উপজেলায় হিন্দু ভোটারদের আধিক্য। প্রতিটি নির্বাচনে এখানকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এই ভোটব্যাংকে দৃঢ় অবস্থান প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বিজয়ের সমীকরণ অনেকটাই সহজ হবে।
ফলস্বরূপ, বরিশাল-১ আসনে এবারের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তীব্র প্রতিযোগিতা, দলীয় অভ্যন্তরীণ কৌশল ও ধর্মীয় ভোটব্যাংকের ব্যবস্থাপনাই হবে মূল চাবিকাঠি।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply