বরিশাল (সংশোধিত) নগরীতে দিন দিন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি উপেক্ষা করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব চক্র মাদক বাণিজ্য, চুরি, ছিনতাই, জমি দখল, সন্ত্রাস, অস্ত্র প্রদর্শনী এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, এসব চক্রের অধিকাংশ সদস্যই উঠতি বয়সী তরুণ ও কিশোর। তারা এলাকাভিত্তিক গ্যাং গড়ে তুলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নগরীর অলিগলিতে বিস্তার ঘটেছে মাদক সিন্ডিকেটের, যেখানে দলবেঁধে চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে হুমকি, হামলা কিংবা রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চক্রগুলোর বেশিরভাগই যে দল ক্ষমতায় থাকে, সেই দলের নাম ব্যবহার করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে সাধারণ নাগরিক ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে সাহস পান না। অপরদিকে, চক্রগুলোর সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে দেশীয় অস্ত্র সর্বদাই প্রস্তুত থাকে। ক্ষমতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে সড়কে দাপিয়ে বেড়ায়, সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তুচ্ছ বিষয় নিয়েও ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে অন্তত ৭০টির বেশি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা মাদক, ছিনতাই, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করছে।
নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে কিশোরদের হাতে। সদর রোড, জিলা স্কুল, বিএম স্কুল, মুন্সি গ্যারেজ, জিয়া সড়ক, হাতেম আলী চৌমাথা থেকে শুরু করে কাউনিয়া বিসিক, হাউজিং, ভাটিখানা, মতাশা, পুরানপাড়া এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন অপরাধী চক্র।
এছাড়া কালিজিরা নদীর পাড় থেকে চরবাড়িয়া নদীপাড় পর্যন্ত অন্তত ১৫টি এলাকাকে মাদকের ‘স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ত্রিশ গোডাউনের খালপাড় সড়কে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি ও সেবনের দৃশ্য সাধারণ মানুষকে বিব্রত ও উদ্বিগ্ন করছে।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়ে অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে নগরবাসী মুরাদ হোসেন বলেন, “গাঁজার গন্ধে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকা দায় হয়ে যায়, বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল (সংশোধিত) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, “ছিচকে মাস্তান ও মাদক বিক্রেতাদের দাপটে নগরবাসী আজ আতঙ্কে। কিশোর গ্যাংয়ের মোটরসাইকেল বহর জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।”
এ বিষয়ে বরিশাল (সংশোধিত) মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “নগরীর চারটি থানার প্রতিটিতে নিয়মিত টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ঘটনাগুলো আমাদের নজরে এসেছে, প্রতিটি স্পটে অভিযান জোরদার করা হবে।”
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply