বরিশাল (সংশোধিত)সহ সারা দেশে তীব্র তাপদাহে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। চৈত্র মাস শেষ হলেও বৈশাখ মাসজুড়ে চলছে অসহনীয় গরম। এই প্রচণ্ড গরমে শরীর থেকে ঘাম হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রচুর পানি, ফলে দেখা দিচ্ছে পানিশূন্যতা। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ এবং যারা বাইরে কাজ করেন, তাদের জন্য এই গরম হয়ে উঠছে বিপজ্জনক।
এই অবস্থায় তৃষ্ণা মেটাতে নগরবাসী ভরসা করছেন রাস্তার পাশের ঠাণ্ডা পানি ও লেবু-আম-বেলসহ নানা ফলের শরবতের উপর। কর্মব্যস্ত নগরজীবনে অনেকের পক্ষে বিশুদ্ধ পানি বা স্বাস্থ্যকর পানীয় সংগ্রহ করা কঠিন হওয়ায় তারা নির্ভর করছেন ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতাদের উপর। তবে এসব শরবতের মান ও নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে বড় ধরনের উদ্বেগ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ফলের শরবত স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও তা অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি, পরিষ্কার ফল ও নিরাপদ চিনি ব্যবহার করে তৈরি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাস্তার পাশে যেসব দোকানে শরবত বিক্রি হয়, সেখানে অধিকাংশ সময় ব্যবহৃত হয় অনিরাপদ পানি ও মাছ সংরক্ষণের বরফ। ফলে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা পানিবাহিত রোগে।
বরিশাল (সংশোধিত)ের সচেতন নাগরিক এ.এস.এম একরামুল হুদা বাপ্পী বলেন, “ভ্রাম্যমাণ দোকানের শরবত পান করাটা একপ্রকার আত্মহত্যার সামিল। আমি নিজের চোখে দেখেছি কিভাবে মাছ বাজারের বরফ ব্যবহার করে কুলফি ও শরবত তৈরি করা হচ্ছে। এসব বরফ মূলত মাছ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।”
বরিশাল (সংশোধিত) সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, “অস্বাস্থ্যকর পানীয় থেকে বরিশাল (সংশোধিত)ে ডায়েরিয়াসহ সংক্রামক রোগের প্রকোপ বেড়েছে। রাস্তার শরবত এড়িয়ে চলা উচিত। এ সময় বিশুদ্ধ পানি, ওরাল স্যালাইন ও ডাবের পানি পান করা সবচেয়ে ভালো।”
নগরীর জেলখানার মোড়, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, স্কুল-কলেজের সামনে ঘুরে দেখা গেছে, শরবত বিক্রেতাদের অনেকের ফিলটার বক্সে পানি বিশুদ্ধ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বরং চাপ কল থেকে সরাসরি আনা পানি দিয়েই শরবত তৈরি করছেন তারা।
শরবত বিক্রেতা কালাম জানান, “প্রতিদিন ২০০-৩০০ গ্লাস শরবত বিক্রি করি। পানি চাপ কল থেকে আনি।” এদিকে এক রিকশাচালক মন্নান জানান, “তৃষ্ণা পেলে শরবত খাই। ভালো-মন্দ চিন্তা করার সময় আমাদের মতো গরীবদের কোথায়?”
এ প্রসঙ্গে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, “শরবতে ব্যবহৃত বিট লবণও অনেক সময় নিরাপদ নয়। মানুষের অসচেতনতার সুযোগে অনেক বিক্রেতা স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ উপকরণ ব্যবহার করছেন। এ থেকে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পথচারীরা। তাই এসব শরবত থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।”
প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস ঠাণ্ডা শরবত স্বস্তি দিলেও এর আড়ালে লুকিয়ে থাকা স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়লেই এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply