
ভাদ্রের লাগাতার বর্ষণের সাথে নিত্য পণ্যের অগ্নিমূল্যে চরম দূর্ভোগে বরিশালের সাধারন মানুষ। চাল, ডাল আটা,চিনি আর ভোজ্য তেলের পরে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি নতুন দূর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বর্তমান অর্ন্তবর্তি সরকারকে নিত্যপণ্যের বাজার সাধারন মানুষের নাগালে আনতে কঠোর মনোভাব নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনার আহবান জানিয়েছেন বরিশালের আমজনতা।
অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বরিশালের বাজারে এখন প্রতি ৪টি ডিম বিক্রী হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। ব্রয়লার মুরগী থেকে সব ধরনের মুরগী আর গরু-খাশী’র গোসতের অগ্নিমূল্য ইতোপূর্বে সাধারন মানুষের আমিষের ঘাটতি তৈরী করলেও এখন আর কারো কিছু করার নেই বলেই মনে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগীর কেজী ২শ টাকার ওপরে। সোনালী ও কক-এর দামও সাড়ে ৩শ টাকা থেকে সাড়ে ৪শ টাকা। গরুর গোসতের কেজি সাড়ে ৭শ টাকার নিচে আর নামছেনা। কোন কোন দিন তা ৮শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। খাশির গোসত ১৪শ টাকা কেজি। সব ধরনের সবজির দামও ইতোপূর্বের সব রেকর্ড ছাপিয়ে চলেছে। এসব কিছুর মধ্যে বুধবার বরিশালের বাজারে পেয়াঁজের কেজি ১২০টাকা ছুয়েছে।
‘বাজার মনিটরিং’ নামের সরকারী কর্মকান্ডটি ইতোমধ্যে বরিশালে ‘কাগুজে বাঘ’এ পরিনত হয়েছে। গত ৫ আগষ্টের পরিবর্তনের পরে ছাত্র-জনতা রাস্তায় শৃংখলা বিধানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাজার মনিটরিং শুরু করলে কিছু পণ্যের দাম কমে আসে। কিন্তু ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরার পরে বরিশাল মহানগরী সহ সন্নিহিত এলাকায় যেমনি পুরনো চালচিত্র ফিরে এসেছে,তেমনি বাজার পরিস্থিতিও আবার বেহাল।
অপরদিকে রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা টিসিবি’ও প্রায় দুমাস নিশ্চুপ থাবার পরে ২৭ আগষ্ট থেকে শুত্রমাত্র দু কেজি চিনি, ২ লিটার ভোজ্য তেল ও ৩০টাকা কেজি দরে ৫স কেজি চাল বিক্রী কার্যক্রম শুরু করে তার দায় সারছে। পাঁচ লাক্ষাধিক জনসসংখ্যার বরিশাল মহানগরীতে ১০৭ জন ডিলার মাত্র ৯০ হাজার মানুষের কাছে এসব পণ্য বিক্রী করছে। প্রায় ৯১ লাখ জনসংখ্যার এ অঞ্চলে মাত্র ৫ লাখ ৯৯ হাজার মানুষ টিসিবি পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ ইতোপূর্বে ডিলার ছাড়াও ট্রাকের মাধ্যমে যেকোন মানুষ টিসিবি পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। বিগত সরকার বছর দুয়েক আগে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য কেনার যে সুযোগ করে দিয়ে গেছে, সেখানে দলীয় লোকদের প্রধান্য দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমোনও বিগত সরকার আমলের তালিকাভ’ক্তদেরই টিসিবি’র পণ্য দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাও প্রায় দু মাস পরে ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল, ১শ টাকা লিটারে ২ লিটার ভোজ্যতেল ও ৬০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি মুসুর ডাল সরবারহ করা হচ্ছে। চিনি সহ আরো কেয়েকটি পণ্যের কোন সরবারহ নেই। তাও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের পরে আগষ্টের ২৭ তারিখ থেকে এসব পণ্য বিক্রী করছে টিসিবি।
এদিকে বরিশালের বাজারে গত দু মাসে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বর্ণা নামের মোটা চালের কেজিও এখন ৫০ টাকা। ২৮-বালাম বিক্রী হচ্ছে ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে। মধ্যম ভালমানের মিনিকেট চাল বিক্রী হচ্ছে ৬৫-৬৮ টাকা কেজি। আটার কেজিও ৫০-৫২ টাকা ।
সয়াবিন তেলের দাম ১৬৫-১৭০ টাকা লিটার। চিনির কেজি এখনো ১৪০-১৪৫ টাকা। ভাল আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে ভরা মৌসুম শেষ হলেও বরিশালের বাজারে পেয়াঁজের কেজি বুধবারে ১২০টা ছুয়েছে। গ্রামঞ্চলে তা আরো ৫ টাকা বেশী। রসুন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজি। আদার কেজিও ২৪০ থেকে আড়াইশ টাকা কেজি। ভরা মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদনের পরে কৃষকরা ভাল দাম না পেলেও অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বরিশালে বাজার এখন প্রতি কেজি গোল আলু বিক্রী হচ্ছে ৬০ টাকা।
এর সাথে সবজির অগ্নিমূল্য পরিস্থিতিকে আরো একধাপ নাজুক করে তুলেছে। বরিশালের বাজারে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোন ধরনের সবজি মিলছে না। কাঁচা মরিচের কেজি ২শ টাকার ওপরে। এমনকি চলমান ভাদ্রের অতিবর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের প্রায় সব সবজি বাগান প্লাবিত হয়ে বিনষ্টের ফলে আগামী সপ্তাহ থেকে দাম আরো একধাপ বৃদ্ধির আশংকার কথা বলেছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন। এমনকি দুধ, ডিম ও গোসতের মত প্রটিন সমৃদ্ধ প্রতিটি খাদ্য সামগ্রীর উৎপাদনও বরিশাল অঞ্চলে চহিদার অনেক বেশী হলেও অগ্নিমূল্যের কারণে তা আমজনতা ভাগ্যে জুটছে না। ফলে সব বয়সী মানুষের শরীরে আমীষের ঘাটতি দেখা দেয়ার শংকার কথাও বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
মাছের বাজারেও আগুন। ৭-৮শ টাকা কেজির নিচে এখন আর কোন মাছ মিলছে না। এমনকি সারা দেশের ৭০ ভাগ ইলিশ উৎপাদনকারী বরিশালের বাজারে এখন জাতীয় এ মাছের কেজিও সর্বনিন্ম ১২শ টাকার নিচে নয়। ১ কেজি সাইজের ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকার ওপরে।
প্রতিটি নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য বরিশালের সাধারন মানুষের দূর্ভোগকে সব বর্ণনার বাইরে নিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। বরিশালের প্রতিটি কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মুদি দোকানগুলোতে কান পাতলেই আমজনতার হতাশার সাথে ক্ষোভের কথাও ভেসে আসছে।