বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবসহ দেশের নানা স্থানে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভোলায় বাঁধ ভেঙে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিস্তীর্ণ জনপদ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে এবং বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ভোলা : ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ার ফলে মনপুরা, তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অন্তত ২৫টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার মানুষ। পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। জোয়ারে ভেসে নিখোঁজ শতাধিক গবাদিপশু। মনপুরার কলাতলী, ঢালচর ও সাকুচিয়ার চরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরী-মুকরী ও চরপাতিলায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার নৌরুটের লঞ্চ চলাচল। জেলার বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।
বরগুনা : সাগর উপকূলীয় উপজেলা তালতলী উপজেলার নলবুনিয়া, আমখোলা ও নিদ্রার চর এই তিনটি জনপদ ডুবে আছে জোয়ারের পানিতে।
পটুয়াখালী : উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সোয়া লাখ মানুষ। পানিতে দফায় দফায় প্লাবিত হয়ে জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী উপজেলায় অন্তত ছয়টি চরের বেড়িবাঁধের বাইরে ও ভিতরে থাকা মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অজিত দেবনাথ জানান, উপজেলার চর মোন্তাজ, চালিতাবুনিয়া, চরনজির, চর আন্ডাসহ ছয়টি চরে দফায় দফায় প্লাবিত হয়ে অন্তত ১১ হাজার পরিবারের ৩৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, পানির চাপে কিছু এলাকার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : নিম্নচাপের প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে হাজারো মানুষ। গতকাল সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। এদিকে নিম্নচাপটি উপকূল অতিক্রম করলেও বেরিয়ে আসছে এর ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
আজও ভারী বর্ষণের আশঙ্কা বন্দরে ৩ নম্বর সংকেত : আজ শনিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে পুনরায় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় গতকাল বলা হয়েছে, আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল (সংশোধিত), চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল (সংশোধিত), চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী সোমবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামের মাইজদীকোর্টে।
গতকাল সন্ধ্যায় অধিদপ্তর আবহাওয়া পরিস্থিতিতে জানায়, টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত নিম্নচাপ উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শেরপুর ও তৎসংলগ্ন মেঘালয়ে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি হয়ে ক্রমে দুর্বল হতে পারে। স্থল সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply