সৌন্দর্যবর্ধন ও পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে হোটেল সি ভিউ থেকে ঝাউবন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প এখন সমালোচনার মুখে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই জোয়ারের পানিতে রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ ধসে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কয়েকদিনের লঘুচাপের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এই ভাঙনে মেরিন ড্রাইভ ও পাশের সবুজ বেষ্টনীর প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা পুরো এলাকাটিই যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।
জানা গেছে, পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক লীগের সদস্যসচিব ছগির মোল্লার মালিকানাধীন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, আরেক সহযোগী পৌর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেনের মালিকানাধীন মেসার্স আবরার ট্রেডার্স ও সাবেক পৌর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সাদ্দাম মালের মালিকানাধীন এস এম ট্রেডার্স স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাজ পায় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইট ও বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল তোলা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকে বলছেন, পরিকল্পনাহীনভাবে গাইডওয়াল ছাড়া কাজ করায় রাস্তা ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজ ও পর্যটকদের চোখে এখন এ প্রকল্পটি ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যর্থতা’র প্রতীক। কোটি টাকার প্রকল্পে দায়িত্বহীনতা, স্বজনপ্রীতি ও পরিকল্পনার অভাব—সব মিলিয়ে প্রকৃত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছেন সকলে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, এত টাকা খরচ করে কাজ করা হয়েছে। অথচ উদ্বোধনের আগেই ভেঙে গেল।
স্থানীয় জনি বলেন, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। প্রকল্পটি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না।
কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, গাইড ওয়াল ছাড়া এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা ছাড়া সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক।
এসএম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাদ্দাম মাল বলেন, আমি সরাসরি কাজ করিনি, রুহুল আমিন নামে একজনকে সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছিলাম। তবে রুহুল আমিনের ফোন নম্বর তিনি দিতে পারেননি। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন বলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট রুট ম্যাপ অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে তারা দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কাজ এখনো চলমান। অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক বলেন, ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রজেক্ট, ইতোমধ্যেই ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করিয়ে নেওয়া হবে। ব্লক প্রটেকশন অথবা জিওব্যাগের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরামর্শ নেওয়া হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা ক্ষুব্ধ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে চিঠি তৈরি করা হয়েছে। বকেয়া বিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply