হোমঝালকাঠিঝালকাঠিতে সাত টনের নড়বড়ে সেতুতে চলছে ৮০ টনের যান

ঝালকাঠিতে সাত টনের নড়বড়ে সেতুতে চলছে ৮০ টনের যান

বরিশাল ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুর থেকে খুলনা যাওয়ার মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতের প্রস্তাব এখনও আলোচনার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা ও খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনেও প্রস্তাবিত সড়কটি নির্মাণে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। বহু আগে নির্মিত সরু সড়ক দিয়েই চলছে যানবাহন। এতে যানবাহনের চাপে ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর নির্মিত নড়বড়ে সেতুটি আছে সবচেয়ে ঝুঁকিতে।
সাত টন ধারণক্ষম সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন চলছে  ৭০ থেকে ৮০ টন ওজনের যানবাহন। সড়ক বিভাগ এক নোটিশে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে এই সেতুতে যানবাহন ওঠার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না কেউ। ফলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে সড়ক বিভাগ। একই সঙ্গে চার লেন সড়ক নির্মাণের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে  বিলম্ব হওয়ায় সড়ক বিভাগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেতুটি।
স্থানীয়রা বলছেন, বরিশাল থেকে ঝালকাঠি হয়ে পিরোজপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা অত্যন্ত জরুরি। এতে এক দিকে বাসন্ডা নদীর সেতুতে যেমন যানবাহনের চাপ কমবে, তেমনি এই তিন জেলার সড়কপথের যানজট নিরসন হবে। সড়ক চার লেনে উন্নীত হলে ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা সেতু স্পটে তৈরি হবে চার লেনের নতুন আরসিসি সেতু। ঢাকা বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক আব্দুস ছালাম জানান, প্রস্তাবিত চার লেন সড়ক ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বাসন্ডা সেতুটির উচ্চতা প্রথমে ১২ দশমিক ২ মিটার নির্ধারণ করা হয়। পরে উচ্চতা কমিয়ে ৭ দশমিক ৬২ মিটার চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সড়ক বিভাগের।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে যানজট নিরসনে চার লেনের সড়ক এবং বাসন্ডা নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণের সমীক্ষা চলছে। কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, তা বলা যাচ্ছে না। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি জনসাধারণ এবং যান চলাচলে
নিরাপত্তার স্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা দরকার। সাত টনের বেশি মালপত্র বহনকারী যানবাহন যাতে সেতুতে উঠতে না পারে, সে পদক্ষেপ নিতে হবে। কেউ আদেশ ভাঙলে বড় অঙ্কের জরিমানা করা দরকার।
খুলনা থেকে ঝালকাঠি আসা আলুবোঝাই ট্রাকের চালক সাদ্দাম হোসেন জানান, তিনি সাত টনের ট্রাকে ২০ টন চাল নিয়ে বাসন্ডা সেতু পার হয়ে ঝালকাঠি এসেছেন। বাসন্ডা সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এটি অতিক্রম করেন। কারণ খুলনা থেকে গৌরনদী হয়ে ঝালকাঠি আসতে ১৬৫ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরতে হয়। সরাসরি খুলনা থেকে ঝালকাঠি পর্যন্ত সড়কপথের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার।
সেতুসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হারিস সিকদার বলেন, প্রায়ই ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি দুলতে থাকে। সেতুর মাঝের প্লেট দেবে যায়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেক সময় জোড়াতালি দেওয়া প্লেট ছুটে যাওয়ায় লাল নিশানা দেওয়া হয়।
ঝালকাঠি পুলিশ ফাঁড়ির ট্রাফিক পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, সেতুটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এতে সাত টনের বেশি পণ্য বোঝাই যান আটকাতে পারছি না, কারণ পরিমাপক যন্ত্র নেই। তারপরও আমরা সেতুটির যতটা সম্ভব সতর্ক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহারীয়ার শরীফ খান বলেন, বাসন্ডা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি আমাদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন সেতু নির্মাণের জন্য নকশা পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে বরিশাল-খুলনা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতের প্রস্তাবনা দেওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণের সমীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে হলেও ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি আমাদের চলাচলের উপযোগী রাখতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সেতুতে সাত টনের বেশি ওজনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত যান চলাচল রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যেতে পারে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

- Advertisment -spot_imgspot_img

Most Popular