হোমঝালকাঠিঝালকাঠিতে সরকারি লিজকৃত জলমহালের বাধ কেটে ফেলার অভিযোগ

ঝালকাঠিতে সরকারি লিজকৃত জলমহালের বাধ কেটে ফেলার অভিযোগ

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কুমারখালিতে প্রবাহমান সুগন্ধা নদীর একটি মরা শাখা আছে, যা এলাকাবাসীর কাছে মরগাঙ্গী নামেই পরিচিত। পরবর্তীতে ওই মরা নদী চিড়িং চাষের জন্য জলমহল হিসেবে ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক এবং ১২০ একর ইজারাও দেয়া হয় সরকার থেকে।

১৯৮৬ সাল থেকে ওই অংশটি ইজারা নিয়ে চিড়িংসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে আসছেন উপজেলার অনুরাগ গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম (আসিফ) চৌধুরী। জানা যায়, ১৯৮৬ সালে থেকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা নিয়েছেন তিনি। আর এরপর থেকে সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সরকারী কোষাগারে প্রায় কোটি টাকা খাজনাও পরিশোধ করেছেন।

তবে সব কিছু স্বাভাবিক নিয়মে চললেও হঠাৎ করে গত ৩০ জানুয়ারী সকাল ১০ টায় জলমহলটির পশ্চিম-উত্তর পাশের বেড়িবাঁধ কেটে ফেলা ও ওই জলমহালটির গোডাউনে থাকা মাছের খাবার লুট করার অভিযোগ উঠেছে।

আর এ নিয়ে ভুক্তভোগী ইজারাদার ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গতকাল একটি লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, ওই এলাকার জুয়েল জমাদ্দার, মাসুদ, রশিদ, জাকির হাওলাদার, জামাল, সোহেল মুন্সী, এদের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি কোদাল, খোন্তা, রামদা ও লোহার রডসহ লাঠি সোটা ইত্যাদি মূল ভেরিবাধটি জোর পূর্বক কেটে ফেলে ও ওই জলমহালটির গোডাউনে থাকা কয়েক লক্ষাধিক টাকা মাছের খাবার লুট করা হয়।

অভিযোগে আরো বলা হয়, ১৯৯১-১৯৯২ সনে জলমহালটির ভেরিবাদ নির্মাণের জন্য সরকার ১০০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ প্রদান করেন। এবং ওই সময় লীজগৃহিতা ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করে ভেরীবাদ নির্মানে সহায়তা করে। সেই হিসাবে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উক্ত জলমহলটিকে বন্ধ জলমহাল হিসাবে ঘোষণা করেন। যার পরিপেক্ষিতে ইজারাদাররা নিয়মিত ভাবে চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ চাষাবাদ করে আসছে। এছাড়াও স্থানীয় জুয়েল জমাদ্দার, মাসুদ, রশিদ, জাকির হাওলাদার, জামাল, সোহেল মুন্সী এর আগেও জলমহালটির গোডাউনে অগ্নিসংযোগ করে মালামাল লুট করে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করে পুনরায় ভেরিবাধটি সংস্কার করা হয়।

এরপরও অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে আবার ভেরিবাধটি কাটতে আসে। তখন প্রশাসনের সহায়তায় ইজারাদাররা অভিযুক্তদের হাত থেকে ভেরীবাদটি কাটার থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। উক্ত ঘটনার পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ৪ সদস্য বিশিষ্ট টিম করে জমি পরিমাপের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে কানুনগো উপজেলা ভূমি অফিস, সার্ভেয়ার উপজেলা ভূমি অফিস নলছিটি, সার্ভেয়ার ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঝালকাঠি, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্তকর্তা পৌর ভূমি অফিস নলছিটি একটি প্রতিবেদন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে প্রতিবেদন দাখিল করেণ এবং সেই প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের দাবিকৃত জমি লীজকৃত জমির মধ্যে এমন কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এরপর গত ৩০ জানুয়ারী সকাল ১০ টায় অভিযুক্তরা প্রায় শতাধিক ব্যাক্তিদের নিয়ে জলমহালটির মূল ভেরিবাধ কেটে ফেলে।

এঘটনায় ইজারাদাররা তাৎক্ষনিক উপজেরা নির্বার্হী কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি কোন আইনগত পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। পরে ইজারাদার জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানালে তিনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাকে পাঠান এবং পুলিশও তাকে অবহিত করেন। এসময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগীদের কোন প্রকার সহযোগীতা করেন নাই এবং ভেরিবাদটি কাটার পক্ষে সায় দেন বলে অভিযোগটিতে উল্লেখ করা হয়।

এসময় জলমহালটির অফিস ঘর ভেঙ্গে নগদ টাকাসহ আরো কিছু মূল্যবান আসবাবপত্র ও মাছের খাবার লুট-পাট করে নিয়ে যায় এবং ঘরটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ইজারাদাররা প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল বিকেলে মো: নজরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তিনি ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন এবং অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে আশ্বাস দেন। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, বাধ লিজকৃত জমির বাহিরে। আমি সরজমিনে গিয়ে যা দেখেছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাতে অবহিত করেছি।

বাধ কেটে ফেলার সময় আপনি উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। এ বিষয় নিয়ে জানতে রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিক অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন

- Advertisment -spot_imgspot_img

Most Popular