পিরোজপুরের নেছারাবাদে চুরির অপবাদে মো. পারভেজ নামে এক যুবককে স্ত্রী এবং মায়ের সামনে থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে মো. কামরুল হাসান খোকন নামে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
গত ২৬ এপ্রিল উপজেলার উত্তর পশ্চিম সোহাগদল গ্রামে গাছের সঙ্গে বেঁধে যুবককে মারধর করেন ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা খোকন। কামরুল হাসান খোকন উপজেলার উত্তর পশ্চিম সোহাগদল গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও মো. খালেক মাঝির ছেলে। তিনি ওই ওয়ার্ডে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল এলাকার একটি চুরির ঘটনায় সন্দেহের অভিযোগে ওই যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন ইউপি সদস্য খোকন। এ সময় যুবকের বৃদ্ধা মা হনুফা বেগম, স্ত্রী পপি বেগম এবং তার ছোট শিশু সন্তান ইউপি সদস্য খোকনের কাছে মিনতি করলেও দয়া হয়নি তার। নির্যাতনের পর তাকে নেছারাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ তাকে পুরানো একটি ডাকাতি মামলায় কারাগারে পাঠায়।
মো. পারভেজের মা মোসা. হনুফা বেগম বলেন, আমি এ ১০ দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরছি। টাকার অভাবে উকিল ধরতে পারছি না। ছেলের জামিন পর্যন্ত করাতে পারিনি। এখন পর্যন্ত ছেলের মুখটিও দেখতেও পারিনি। খোকন মিয়া একটি চুরির অভিযোগ এনে আমাদের ঘরে এসে ছেলে পারভেজকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বাহিরে নিয়ে যায়। তারপর গাছের সঙ্গে বেঁধে মাথা গাছের সঙ্গে কয়েকটি ধাক্কা দেয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এক পর্যায়ে তিনি একটি প্লাস দিয়ে ছেলের হাতের আঙ্গুলের নখ টেনে ধরে চুরির কথা স্বীকার করায়। নির্মম নির্যাতন করে মেরে তাকে থানায় দিয়ে আসেন। পুলিশ ডাকাতির মামলায় ছেলেকে কারাগারে পাঠিয়েছে। মূলত আমাদের সঙ্গে মেম্বারের জমি নিয়া বিরোধ রয়েছে।
ভুক্তভোগী যুবকের স্ত্রী পপি বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতাম। আমার স্বামী সেখানে বসে মাদকসেবন করত। মাদক থেকে বাঁচতে তাকে নিয়ে গ্রামে নিয়ে আসি। এখানে এসে তিনি একটি সমিলে চাকরি করেন। মূলত এখানে অনেক মাদক বেচাকেনা হয়। এ কারণে এখানে এসেও স্বামী মাঝে মাঝে মাদকসেবন করে। তবে, এখন পর্যন্ত আমার জানা মতে স্বামী কোনোদিন চুরি-ডাকাতি করেনি। এলাকার খোকন মেম্বার আমাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করতে আমার স্বামীকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মম নির্যাতন করে থানায় দিয়েছে। আমরা মেম্বারের হাত থেকে বাঁচতে চাই।
মারধর বিষয়ে স্বীকার করে যুবলীগ নেতা ইউপি সদস্য কামরুল হাসান খোকন বলেন, পারভেজ একজন চোর। তাই তাকে ধরে একটু মারধর করেছি। মূলত তার স্বীকার উক্তি নিতে প্লাস দিয়ে একটু ভয় দেখাইছি। পরে পুলিশের হাতে তাকে তুলে দিয়েছি।
এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে একজনকে ধরে নির্মমভাবে নির্যাতন করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একজন ইউপি সদস্য একটু মারলে কী হয়। তবে, তার সঙ্গে কারও জমি নিয়ে বিরোধ নেই।
নেছারাবাদ থানার ওসি মো. বনি আমিন বলেন, ওই যুবক চুরির কথা আমাদের কাছে বলেছে। ইউপি সদস্য তাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসছিল। পরে একটি মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে ইউপি সদস্য খোকনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দেখা হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply